Site icon CPI(M)

Communists In India: Then And Now

CPI HISTORY COVER

শ্রীদীপ ভট্টাচার্য

এ বছর ১৭ অক্টোবর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ১০৪ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর এ নভেম্বর বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত সোভিয়েত ইউনিয়নের উজবেকিস্তানের প্রধান শহর তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা হয়। পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন যে শাসন তার কোনো বিরোধিতাকেই বরদাস্ত করতে রাজি ছিল না। বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবী আন্দোলনকে সাম্রাজ্যবাদ উপনিবেশবাদ প্রথম থেকেই ভয় পেত। তাই সারা দেশজুড়ে বামপন্থীদের কার্যকলাপ বিশেষ করে কমিউনিস্টদের কার্যকলাপের উপরে ছিল চরম নিষেধাজ্ঞা।  এ হেন পরিস্থিতিতে বিশ্বের  প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নকেই  ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া এটা পরিস্থিতির অবদান। পরিস্থিতিজনিত কারণেই এটা ঘটেছিল। সেই সময়ে  মাত্র সাত জন কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা লগ্নে ওই তাসখন্দে তারা উপস্থিত ছিলেন। ভারতের বুকে মার্কসবাদকে প্রসারিত করার অসামান্য ভূমিকা ছিল এদের। মানবেন্দ্রনাথ রায় এবং তাঁর স্ত্রী এভলিন ট্রেন্ট রয়,  অবনী মুখার্জি, রোজা ফিটিংগফ,  মহম্মদ আলি, মহম্মদ শফিক এবং আচারিয়া এই সাতজন সেই কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা সভায় উপস্থিত ছিলেন। ওই সভাতে সিদ্ধান্ত হয় শফিক হবেন পার্টির সম্পাদক। এবং আচারিয়াকে পার্টির চেয়ারম্যান করা হয়।  এবং এর ভিতরে একটা অংশ ছিলেন যারা মোহাজির ছিলেন ভারত থেকে যারা দেশান্তরী হয়েছিলেন সেই মোহাজিরদের সংগঠিত করা এম এন রায়ের ভূমিকা ছিল। যেমন ছিল মহম্মদ শফিক, মহম্মদ আলি এদের ক্ষেত্রেও। এই হল ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা।  অনেকে ১৯২৫ সালে কানপুরে কংগ্রেসের অধিবেশনে কমিউনিস্ট পার্টির যে সভা হয়েছিল সর্বভারতীয় স্তরে ওটাকে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু এটা ইতিহাসের অপব্যাখ্যা। প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ ই অক্টোবর।

ভারতের মাটিতে ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে প্রথম কমিউনিস্টরা সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের  কানপুর শহরে ১৯২৫ সালে। সেখানেও মানবেন্দ্রনাথ রায়,  তাঁর স্ত্রী এভলিন ট্রেন্ট রায়, মহম্মদ শফিক  এদেরই মূল ভূমিকা ছিল। ভারতের বুকে যখন কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা হচ্ছে সেই পরিস্থিতি আমাদের বিবেচনায় বিশেষভাবে রাখা প্রয়োজন। ১৯০০ পরবর্তী ১৯০১-২-৩-৪-৫ ক্রমান্বয়ে ভারতের বুকে হয়তো বাংলা মহারাষ্ট্র কিছুটা পাঞ্জাব এই প্রদেশগুলোতে প্রথমে সারা দেশ জুড়ে ব্রিটিশ বিরোধী লড়াই জোরদার হচ্ছিল। আসলে ১৮৫৭-১৮৫৯ ভারতের বুকে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম তথা ভারতবাসীর প্রথম যে স্বাধীনতা সংগ্রামের যে প্রবাহ তা প্রবলভাবে শঙ্কিত করেছিল ব্রিটিশ উপনিবেশবাদকে ।  তারা বুঝতে পেরেছিল এই দেশটাকে আর যথেচ্ছভাবে শোষণ, দমন করা সম্ভবপর হবে না যার জন্য ১৮৫৯ সালের পর ভারত শাসনের ক্ষেত্রে ব্রিটিশরা নতুন নতুন পন্থা নিয়েছিল। তার অন্যতম একটা পন্থা ছিল ভারতবাসীকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করা। ইংরাজিতে যাকে বলা হয় Divide and Rule. যেমন ধর্মের বিষয়টাকে ব্যবহার করতে তারা তৎপর হয়ে উঠল আবার ভারতের বুকে যে বর্ণভেদ ব্যবস্থা, জাতিভেদ ব্যবস্থা  এটাকেও ব্যবহার করার উদ্যোগ তখন থেকেই তারা গ্রহণ করেছিল। যাতে বিভাজনকে ভারতবাসীর মধ্যে  স্পষ্টতর করা যায়। আমরা দেখছি ১৯০১-২ সময়কালে নতুন প্রবাহ তৈরি হচ্ছে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের ক্ষেত্রে। আর ব্রিটিশ রাও সেই সংগ্রামকে ভাঙ্গার জন্য মরিয়া৷ বঙ্গভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত, আবার তার বিরুদ্ধেও স্বাধীনতা আন্দোলনের নতুন ধারা অগ্রসর হল। ঠিক এরকম সময়ে আমরা দেখলাম ১৯০৬ ঠিক তার পরেই হিন্দু মহাসভা গড়ে তোলা হলো। হিন্দু মহাসভা কে কেন্দ্র করেই পরবর্তীকালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। কিন্তু ব্রিটিশদের বিভাজনে রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভারতবাসীর ঐক্যবদ্ধ লড়াই, জাতিবর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ তুমি ভারত ছাড়ো এই দাবিতে ক্রমান্বয়ে এই লড়াই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ব্রিটিশদের এই বিভাজনের রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভারতবাসীর ঐক্যবদ্ধ লড়াই কৃষকদের লড়াই এমনকি শ্রমজীবী মানুষ শিল্প শ্রমিকরাও এই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শামিল হতে শুরু করেছে। ঠিক এই পটভূমিকায় নভেম্বর বিপ্লবের বার্তা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে ভারতের বুকেও পৌঁছেছিল।

নভেম্বর বিপ্লব সম্পর্কে বলতে গিয়ে  কমরেড মাও জে দংয়ের একটি উক্তি স্মরণে রাখা প্রয়োজন অরোড়া যুদ্ধজাহাজের কামান গর্জনের মধ্য দিয়া আমরা প্রাচ্যের জনগণ বাঁচার পথের সন্ধানটা পেলাম। স্বাভাবিকভাবেই নভেম্বর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এই যে দীর্ঘকাল ব্যাপী শোষণের অবসান ঘটিয়ে এক উন্নত সমৃদ্ধ শোষণহীন সমাজ এই বিশ্বেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এই বার্তা উপস্থিত করেছিল যে মার্কসীয় মতবাদ তার সন্ধান পেল ভারতের শোষণ বিরোধী উপনিবেশবাদ বিরোধী সংগ্রামের প্রথম সারির যোদ্ধারা।  যার জন্যেই আমরা দেখি ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর  তাসখন্দের ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা হওয়ার অব্যবহিত পরেই এদিকে কলকাতা ওদিকে মুম্বাই তখন বম্বে ওদিকে মাদ্রাস আজকের চেন্নাই ওদিকে লাহোর এই বড় বড় শহরগুলোতে লাল পতাকা পাটির তুলে দিয়ে পার্টির কার্যধারা তা পরিচালিত হতে শুরু করলো।  যদিও প্রথম দিন থেকে ব্রিটিশ শাসকরা এই কমিউনিস্টদের অস্তিত্ব মানতে রাজি ছিলেন না। কমিউনিস্টদের বরদাস্ত করতে তারা বিন্দুমাত্র রাজি ছিলেন না। তাই ওই শিশু পার্টির উপরে প্রথম থেকেই অবর্ণনীয় আক্রমণ ষড়যন্ত্র নামিয়া আনা হয়েছিল। তা না হলে কোন ব্যাখ্যায় আপনি পাবেন একটা শিশু পার্টির বিরুদ্ধে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তিন তিনটে ষড়যন্ত্র মামলা! কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা, পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা, মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা উদ্দেশ্য ছিল অঙ্কুর এই পার্টিটাকে বিনষ্ট করে দেওয়া। কিন্তু ইতিহাস বলছে ব্রিটিশরা যা চেয়েছিল  ঘটনা তার উল্টো দিক ধরে এগোলো। তিন তিনটে ষড়যন্ত্র মামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি সারা ভারতে শুধু তার পরিচিতি বৃদ্ধি করতে পারল তাই নয় কমিউনিস্টরা কী চায় কী তাদের লক্ষ্য ভারতীয় জনগণের জন্য কোন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছে তারা সমস্ত কিছু পরিষ্কারভাবে ভারতীয় জনগণের কাছে উপস্থিত করা সম্ভব হল। কমিউনিস্ট পার্টি একটা ভিত তৈরি করতে সমর্থ হল। প্রায় ১০৩ বছর অতিক্রম করে ১০৪ তম বরষে পার্টি পদার্পণ করছে। এক গৌরবময় অতীত এই ঐতিহ্য আমাদের রয়েছে  আজকের কমিউনিস্ট পার্টির প্রজন্মের বা আজকের প্রজন্মের কমিউনিস্ট কর্মীদের এই গর্ববোধ বিশেষভাবে থাকা প্রয়োজন।  ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক হলো মার্কসীয় মতাদর্শকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ভারতীয় পরিস্থিতি কে বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে কমিউনিস্টরা অগ্রসর হয়েছিল। দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতের ইতিহাসকে অনুশীলন করা ভারতেয় মর্মবস্তুকে অনুধাবন করা কমিউনিস্টরাই প্রথম এক্ষেত্রে পথ দেখিয়েছিল। এই কয়েক হাজার বছর ধরে  ভারতীয় সভ্যতা অগ্রগতি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর আগমন  ভারতের ভিতর তাদের গ্রহণ করা এইভাবে ভারতের মর্মবস্তুর ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধিকরণ যার মধ্য দিয়ে বহুত্ববাদী ভারতের ভিত্তি রচিত হয়েছিল। এই ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতের ইতিহাসকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পেরেছিল কমিউনিস্টরা। আবার এই দেশের বিপ্লবী মতবাদ প্রয়োগ করে এক শোষণহীন ভারত প্রতিষ্ঠা করবার জন্য বিপ্লবের পথ রচনাতেও সেই সদ্য প্রতিষ্ঠিত পার্টি প্রয়াস নিয়েছিল, বিতর্কও হয়েছে। ভারতের বুকে সর্বহারার নেতৃত্বে শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কর্মসূচী এটা রচনা করতে গিয়ে পার্টির অভ্যন্তরে বিভিন্ন মতভেদ এবং বিতর্ক। মতভেদ ও বিতর্ক ছাড়া কমিউনিস্টরা কিছুতেই এগোতে পারে না।  মতভেদ বা বিতর্ক মতাদর্শকেই আরো শক্তিশালী করে। এই উপলব্ধি নিয়েই কমিউনিস্টরা দেশে দেশে তারা বিতর্কের পথ গ্রহণ করে এবং বিতর্কের মধ্যে দিয়েই সঠিক সিদ্ধান্ত সঠিক পথে তারা উপনীত হয়। ভারতের বুকেও তাই হয়েছে এবং এই বিতর্কের মধ্যে দিয়েই ভারতীয় সমাজ সেই সমাজ যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির অধীনে স্বাধীনতার যে সংগ্রাম পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার যে সংগ্রাম সেই সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেণীর ভূমিকা সুবিশাল। কৃষকদের ভূমিকা ছিল, আবার তরুণ প্রজন্ম শিক্ষিত অংশ ছাত্রছাত্রীরাও তাদের ভূমিকা রেখেছিল। বুদ্ধিজীবী সাহিত্যিক শিল্পী এদের ভূমিকাকে সঠিক ভাবে অনুধাবন প্রথম করতে পেরেছিলেন ভারতের কমিউনিস্টরাই। তাই আমরা দেখি ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের ধারাতে ভারতের বুকে শ্রমিকদের সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন, কৃষকদের সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠন , ছাত্রদের সর্বভারতীয় ছাত্র সংগঠন , সাংস্কৃতিক কর্মীদের সর্বভারতীয় সংগঠন এগুলি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কমিউনিস্টরা ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়েছিল।

ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ক্রমান্বয়ে শক্তি অর্জন করে । এইরকম অবস্থায় দেখা দেয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এই বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েও কমিউনিস্টরা স্বাধীনতা সংগ্রামকে জোরদার করার লক্ষে কাজ করেছে। ভারতের কমিউনিস্টরা সঠিক ভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন পরিস্থিতির পরিবর্তন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলতে চলতে ১৯৪১ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রান্ত হলো জার্মান বাহিনীর দ্বারা । এতকাল যে যুদ্ধটা ছিল সাম্রাজ্যবাদের মধ্যেকার যুদ্ধ সেই যুদ্ধের চরিত্রে কমিউনিস্ট রাই প্রথম পরিবর্তন উল্লেখ করেছিল তা মুক্তি যুদ্ধে রূপান্তরিত হলো।একদিকে ফ্যাসিবাদ গোটা বিশ্বের মানব সভ্যতাকে গ্রাস করতে চাইছে আর ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার জন্য। ওই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র না বাঁচলে বিশ্বের মেহনতি মানুষের  স্বপ্ন কে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব না । এই যে যুদ্ধের চরিত্র পরিবর্তনকে  কমিউনিস্টরা সঠিক ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলেই একদিকে ফ্যাসিবাদের চরম আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে ভারতের মত উপনিবেশবাদ বিরোধী সংগ্রামের দেশ গুলিতে জনগনের কাছে তার আহ্বান পৌঁছে দিতে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন  আবার একইসাথে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম ও সেই সংগ্রামের ধারাও জারি ছিল। এই সময় কমিউনিস্ট দের বিশ্ব পরিস্থিতি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এই সঠিক পন্থা ভারতের দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তিগুলির একাংশের উপলব্ধির মধ্যে আসেনি আরেক অংশ পরিকল্পিত ভাবে সেদিন কমিউনিস্টদের কুৎসার অভিযানে নেমেছিল।কিন্তু এই কুৎসা করেও কমিউনিস্টদের জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়নি। জনগন তার  অভিজ্ঞতায় দেখেছিলেন একদিকে কমিউনিস্টদের নীতিনিষ্ঠ অবস্থান আবার সেই সময়ে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতিতে জনগণকে রক্ষা করবার ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের নিরন্তর নিরবিচ্ছিন্ন ধারায় কার্যক্রম যা জনগণের থেকে কমিউনিস্ট দের বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনাকে নষ্ট করেছিল এবং ষড়যন্ত্রকে পরাস্ত করেছিল।

স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাক্কালে আমরা জানি ভারতের বুকে বিখ্যাত সব কৃষক আন্দোলন । ওদিকে বাংলার  তেভাগার লড়াই ওদিকে পুন্নাপ্রাভায়ালার মালাবার উপদ্বীপের কৃষকদের লড়াই সর্বোপরি তেলেঙ্গানার কৃষকদের সংগ্রামের মহাকাব্য প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই কৃষকদের সংগঠিত করা , আন্দোলন সংগ্রামের পথ ধরে এগিয়ে চলার মূল শক্তির ভূমিকা নিয়েছিলেন কমিউনিস্টরা। আবার সেই সময় বড়ো বড়ো শ্রমিক আন্দোলন  কলকাতা, বোম্বে , মাদ্রাজ , লাহোর, মহারাষ্ট্রের সোলাপুর,অপরদিকে পেশোয়ার সমেত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে সেক্ষেত্রে কমিউনিস্ট রা গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা নিয়েছিল। রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভির  বিদ্রোহ নৌবিদ্রোহ সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও কমিউনিস্টদের ছিল অসামান্য ভূমিকা। সংগ্রামের ধারাতেই ভারত স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৭ সালে।স্বাধীনতার প্রাক্কালে যেভাবে গণআন্দোলন  শ্রেণী সংগ্রাম গুলি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল তাতে শঙ্কিত ব্রিটিশরা তারা আপোসের মাধ্যমেই ভারতবাসীকে  স্বাধীনতা অর্পণ করার পথ ধরতে চাইল । স্বাধীনতা আমরা পেলাম তবে দেশ দ্বিখণ্ডিত হলো ভারত এবং পাকিস্তানে। স্বাধীনতার পর যারা ভারতের শাসনের দায়িত্বে এলেন  ভারতের বৃহৎ পুঁজিপতিদের নেতৃত্বে পুঁজিপতি জমিদারদের যে শ্রেণী জোট তারাই। ভারতের স্বাধীনতার পর আজকে ২০২৩ , ৭৬ বছর অতিক্রম করে ৭৭ বছরের দিকে এগিয়ে চলেছে ভারতের স্বাধীনতা। লাগাতার ভারতকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে এই বড়ো পুঁজিপতির নেতৃত্বে পুঁজিপতি ও জমিদারদের শ্রেণীজোট। স্বাধীনতার পর ভারতের শাসকদের শ্রেণী চরিত্র নির্ধারণ করা কমিউনিস্টরা সঠিক ভাবে করেছিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রেও কমিউনিস্ট পার্টির ভিতরে বিতর্ক ছিল, এমনকি স্বাধীনতার চরিত্র নিয়েও বিতর্ক ছিল । পার্টির অভ্যন্তরের এক গুরুত্বপূর্ন অংশ মনে করতেন এ ‘আজাদী ঝুটা হে’ কিন্তু সঠিক ভাবে মার্কসবাদের প্রয়োগ করেই রাজনৈতিক স্বাধীনতা যে আমরা অর্জন করেছি এই সিদ্ধান্তেই কমিউনিস্টরা উপনীত হয়েছিল। তবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আমাদের অর্জিত হওয়ার ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গুলি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল।

স্বাধীনতার চরিত্র নির্ধারণ করতে গিয়ে কমিউনিস্টরা খুব পরিষ্কার ভাবেই বলেছিল যে স্বাধীন ভারত রাষ্ট্র বৃহৎ পুঁজির নেতৃত্বে পুঁজিপতি জমিদারদের রাষ্ট্র যা ক্রমান্বয়ে বেশিবেশি করে বিদেশি লগ্নি পুঁজির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে এবং স্বাধীনতার পর বুর্জোয়া জমিদারি শাসনে সৃষ্ট সংকট যা সারা দেশে প্রতিফলিত হচ্ছিল শ্রমিক  কৃষক  সহ নিম্নবিত্ত গরিব এবং মধ্যবিত্তরা ক্রমান্বয়ে যারা জর্জরিত হচ্ছিলেন তাদের সংগঠিত করে শ্রেণি এবং গণ আন্দোলন গড়ে তোলার কাজ পরিকল্পিত ভাবেই কমিউনিস্টরাই সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গড়ে তোলবার প্রশ্নে অগ্রসর হয়েছিল। এবং ক্রমান্বয়ে কমিউনিস্ট পার্টির প্রসার এবং প্রভাব সমগ্র দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনুভূত হচ্ছিল। প্রথম সাধারণ নির্বাচন দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনে কমিউনিস্টরা বিরোধী শক্তি হিসেবে ভারতীয় সংসদীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ভারতে বুকে  মার্কসীয় মতবাদ প্রয়োগ করা ভুললে চলবে না এ দেশ একটা বৈচিত্রপূর্ণ দেশ। যদি এই ইংরেজি শব্দগুলোকে মাথায় রাখি মাল্টিলিঙ্গুয়াল ,মাল্টি ন্যাশনাল্‌,মাল্টি কালচারাল  বহু জাতি বহুভাষী বহু সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন নিঃসন্দেহে ভারত এই পৃথিবীতে।  এইরকম দেশে বিভিন্ন প্রান্তের শ্রেণী সংগ্রাম গণ আন্দোলনের অগ্রগতি র অসমতা এটাই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক নয়। মানুষের সংস্কৃতি বোধ, চেতনা আমাদের গুরুতর অসমতা এগুলিকে বিবেচনায় রেখে মার্কসীয় মতবাদের প্রয়োগের মধ্য দিয়েই বিপ্লবের পথ প্রস্তুত করা সত্যি এটা খুব জটিল কাজ। যার জন্য আমরা দেখি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রকৃত কর্মসূচি যা বলে সেই কর্মসূচি ১৯৫১ সালের আগে পার্টি প্রস্তুত করতে পারেনি। বিভিন্ন দলিল গৃহীত হয়েছে, ড্রাফট প্ল্যাটফর্ম অফ অ্যাকশন এরকম বিভিন্ন নামে বিভিন্ন দলিল, এগুলি কর্মসূচির লক্ষ্যে দলিল। কিন্তু কর্মসূচি বলতে যা বোঝায় ,যা কমরেড লেনিন বর্ণনা করেছিলেন What should be the contents of the communist party programme?  লেনিন বলেছিলেন -কমিউনিস্ট পার্টির প্রোগ্রামের দলিল সেটাই যেখান সেই দেশের রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্যের বর্ণনা থাকবে। সেই দেশের সেই রাষ্ট্রের শ্রেণিচরিত্রের সঠিক বিশ্লেষণ থাকবে। বিপ্লবী শক্তির যে জোট শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে সেই জোটের ব্যাখ্যা থাকবে বর্ণনা থাকবে। বিপ্লবের চরিত্র সুস্পষ্টভাবে উপস্থিত করা হবে এবং বিপ্লব পরবর্তী সমাজতন্ত্র নির্মাণের প্রক্রিয়া সেটাকেও ব্যাখ্যাসহ উপস্থিত করা হবে।

১৯৫১ সালে যে দলিল গৃহীত হয়েছিল তিন বছরের অভিজ্ঞতায় সেটা বোঝা গেল সেটা কার্যকর নয়। তা বাতিল হয়েছিল। এবারে সঠিকভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করবার সংগ্রাম দশ বছর ধরে কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে হয়েছে। এটা কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির প্রাণশক্তির একটা অসামান্য দিক। একদিকে স্বাধীন ভারতে জনস্বার্থে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের স্বার্থে, আবার আদিবাসী পশ্চাদপদ মানুষের স্বার্থে,  ওদিকে মহিলা ছাত্র এদের স্বার্থে আ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে  সংগ্রাম সংগঠিত করার কাজ কমিউনিস্টরা আন্তরিকতার সাথে করছিল। আবার মার্কসবাদ লেনিনবাদকে প্রয়োগ করে পার্টির বিপ্লবের পথ প্রস্তুত করা এই প্রশ্নে গুরুতর বিতর্ক পার্টির ভিতরে পরিচালিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সংশোধনবাদী সব চিন্তা ভাবনাকে পরাস্ত করেই প্রকৃত শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবী পার্টি হিসাবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্ক্সবাদীর (সি পি আই এম ) প্রতিষ্ঠা ১৯৬৪ সালে । ১৯২০ তে সি পি আই (এম) এর প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর লাগাতার মতাদর্শের উপর দাঁড়িয়ে যে ঐতিহাসিক সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে তার স্বাভাবিক ফলশ্রুতি হল CPI(M) এর প্রতিষ্ঠা এবং CPI(M) প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর আজকে কেটে গেছে প্রায় ৫৯ বছর। এই ৫৯ বছরে আমরা দেখেছি বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের তাদের কার্যধারার মধ্যে বহু নতুন উপাদান যুক্ত হয়েছ।  লগ্নিপুঁজির আধিপত্যের যে সাম্রাজ্যবাদ,আজকে তা আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির আধিপত্যে রূপান্তরিত হয়েছে এবং বিশ্বায়িত লগ্নিপুঁজির চরম আগ্রাসন আমরা ক্রমান্বয়ে  প্রত্যক্ষ করেছি। এটাও ঠিক বিশ্বের বুকে শ্রেণি আন্দোলন গণ সংগ্রামের  বিকাশ কোনো কোনো ক্ষেত্রে পশ্চাদাপসারণ সাফল্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাময়িক হলেও পরাজয় এমনকী পৃথিবীর প্রথম সামজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন, তার বিপর্যয় তাও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি এবং এই বিপর্যয়ের পরে সারা বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের যে প্রবল উল্লাস ওদের কোনো কলমচী তো লিখেই ফেললেন এন্ড অফ হিস্ট্রি, ইতিহাস শেষ।  তারাও আজ মাথা চাপড়াচ্ছে কারণ কোনো কোনো দেশের সমাজতান্ত্রিক বিপর্যয় পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদকে সংকট মুক্ত করতে তো পারেই নি। বরঞ্চ আজকের বিশ্বে আমরা লক্ষ্য করছি আরো গভীরতর সংকটে জর্জরিত সমগ্র পুঁজিবাদ।

২০০৮ সাল থেকে তৈরি হওয়া মন্দা যা আজকে দীর্ঘস্থায়ী মন্দায় রূপান্তারিত হয়েছে।কোনো মতেই বিশ্বপুঁজিবাদ এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। সংকটের বোঝা ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর চাপিয়েও তারা এই সংকটের থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না এবং পুঁজিবাদ মানেই মানুষের দুর্দশা বেকারি পশ্চাদপদতা বৈষম্য নারীর অবমাননা শিক্ষার বেসরকারিকরণ যুবশক্তির অপচয় তা আজকে বিশ্বজুড়ে সমস্ত পুঁজিবাদি দেশেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অর্থাৎ গুরুতর সংকটের আবর্তে বিশ্বপুঁজিবাদ। মার্কসীয় মতবাদ এভাবে বলা ভালো  সমাজ বিজ্ঞান হিসেবে মার্কসীয় মতবাদ  বিজ্ঞান কে অবলম্বন করেই এটা প্রমাণ করেছে, পুজিবাদের যে মৌলিক দ্বন্দ্ব সামাজিক উৎপাদন এবং ব্যক্তিগত পুঁজিবাদী মালিকানা এ দ্বন্দ্বের সমাধান পুঁজিবাদ করতে পারে না। এই দ্বন্দ্বের সমাধান একমাত্র সমাজতন্ত্রে সম্ভব কারণ সামাজিক উৎপাদনের  সঙ্গে  সঙ্গতি রেখে  সামাজিক মালিকানা যার সমাজতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক। যতদিন না পুঁজিবাদের  মৌলিক দ্বন্দ্বের সমাধান হচ্ছে সংকট শুধু ছোবল মারবে না মানব সমাজকে, মানবসমাজের অস্তিত্বকে ক্রমান্বয়  বিপদাপন্ন করবে।  আজকে আমরা গরিবের সংকট ইত্যাদির নামে আমরা দেখছি সবই এই প্রবল ছোবলের নানা রূপ বা প্রতিফলন।  এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি একদিকে মার্কসবাদ লেনিনবাদের মতবাদ।  সেই মতবাদ কে সঠিক ভাবে ভারতের বুকে প্রয়োগের নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়েছে। এই সংগ্রাম চালাতে গিয়ে ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে চরম দক্ষিনপন্থি সংশোধনবাদ ( যা কুরে কুরে মার্কসবাদের বিপ্লবী শক্তিকে ধ্বংস করে দেয়) আবার অপর দিকে চরম বামপন্থী বিচ্যুতি ( যাও কিনা প্রকারান্তরে দক্ষিণপন্থা ও প্রতিবিপ্লব কে সাহায্য করে) এই দুই বিচ্যুতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

এমনকি সংগ্রামের পথে একসময় বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে সি পি আই (এম)-কে একঘরেও করা হয়।  কিন্তু মার্কসবাদের মতাদর্শের উপরে প্রবল ভাবে আস্থা রেখে পার্টি দাঁড়িয়ে থাকতে সমর্থ হয়েছে এবং পার্টির সঠিক মতাদর্শগত অবস্থান এমনকি বিশ্বেও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) তার স্বীকৃতি সম্ভব করেছে।  দীর্ঘ সংগ্রামের পথে যে অভিজ্ঞতা যে শিক্ষা আমরা অর্জন করেছি তাকে পাথেয় করেই  ভারতের বুকে কমিউনিস্টরা যে লক্ষ্য নিয়ে তাদের কার্যধারা শুরু করেছিল যা আজও অর্জিত হয়নি অর্থাৎ গণতান্ত্রিক বিপ্লবের যে অসমাপ্ত কাজ তা সম্পূর্ণ  করেই ভারতীয় সমাজ কে সমাজতন্ত্রের পথে সেই কাজকে এগিয়ে  নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আজকে আমরা ১০৪ তম প্রতিষ্ঠা দিবস ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি আলোচনা করছি।  আমাদের দেশের বুকে সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভারতকে আজকে শাসন করছে এক ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট চরিত্রের RSS। তার দ্বারা  পরিচালিত ভারতীয় জনতা পার্টি। মোদি তাদের প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রী৷  এরা ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত RSS ভারতের বহুত্ববাদ ধর্মনিরপেক্ষতাকে কখনো স্বীকার করেনি৷ এমনকি বাবা সাহেব এর নেতৃত্বে ভারতের কনস্টিটুয়েন্ট এসেম্বলি ভারতের যে  সংবিধান তৈরি করেছিলেন RSS  তাকে গ্রহণ করেন নি তারা দৃঢ় ভাবে মনে করেন মনুস্মৃতি হচ্ছে ভারতের একমাত্র সংবিধান। আজকে এই RSS পরিচালিত বিজেপি সরকার কেন্দ্রে সরকারে থাকার এই যে  অবস্থান এটাকে  ব্যবহার করে তারা হিন্দুত্ববাদ ভারত, ভারত কে  হিন্দুত্ববাদি রাষ্ট্রে পরিণত করতে উঠে পরে লেগেছে। RSS নাগপুর তার লক্ষ্য হচ্ছে RSS প্রতিষ্ঠার শততম বর্ষ ২০২৫।  তার মধ্যে ভারত কে হিন্দুত্ববাদি রাষ্ট্রে পরিণত করবে এবং মোদীর সরকার সেই লক্ষেই ঝাঁপিয়ে পরেছে।  সামনে লোকসভা নির্বাচনে ওরা সেই লক্ষে তাদের অভিযানকে জোরদার করতে আরো মরিয়া হবেন।  আজকে ভারতের যে মর্মবস্তু বহুত্ববাদ ধর্মনিরপেক্ষতা গণতন্ত্র ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে।

বহু সম্প্রদায়ে বহু জাত বহু ভাষার যে ভারত সবটাকেই তারা তাদের মতো হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থান ইংরাজিতে বলে Straight Jacket, ওরা ঢোকাতে তৎপর অর্থাৎ আজকে ভারতের মর্মবস্তু আক্রান্ত। এবং তার সঙ্গে আমরা দেখছি নয়া- উদারবাদের ভয়ঙ্কর আগ্রাসী রূপ। শ্রমিক কৃষক ক্ষেতমজুর সহ সমস্ত প্রান্তিক মানুষ  পশ্চাদপদ মানুষ গরিব নিম্নবিত্তের মানুষের আজকে অস্তিত্ব বিপদাপন্ন বাঁচার লড়াই বাড়ছে এ হেন পরিস্থিতিতে একদিকে গণ আন্দোলন ক্রমান্বয়ে শক্তিশালি করা  শক্তিশালি করা সমগ্র দেশব্যাপি শ্রেণি আন্দোলনের ধারাকে  তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর  করা পশ্চাদপদ অংশ ,  তফশিলি জাতি আদিবাসী সহ সমস্ত অংশের লড়াই সেই লড়াইকে ক্রমান্বয়ে  শক্তিশালী করা এটাই একমাত্র পথ।যা কিনা ভারতীয় জনগন কে এক উন্নততর ভবিষ্যতের সন্ধান  দিতে পারে অবশ্যই এ চরম সাম্প্রদায়িকতার বিষ আজ ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বা এখনো ছড়ানো  হচ্ছে তার বিরুদ্ধে লাগাতার সংগ্রাম ছাড়া ঐক্যবদ্ধ  গণ আন্দোলন  শ্রেনী সংগ্রাম গড়ে তোলা ছাড়া আর পথ নেই। 

আবার এটাও ঠিক বাংলার মাটিতে আমরা যখন এই ১০৪ তম কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবস বা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ১০৪ তম দিবস পালন করছি তখন পশ্চিমবাংলার বুকেও দ্বিদলিয় ব্যবস্থার প্রচলন করা ইংরাজিতে binary politics দ্বি-দলীয় রাজনীতি এক ভয়ঙ্কর দক্ষিনপন্থী  প্রয়াস আমরা প্রত্যক্ষ করছি।  একদিকে চরম দুর্নীতিবাজ স্বৈরাচারী স্বেচ্ছাচারী   গণতন্ত্রকে মানে না মানুষের অধিকার কে পদদলিত করে তৃণমূল কংগ্রেস এই রাজ্যে যারা সরকারে আছে। বিজেপির সঙ্গে RSS বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে এক বাইনারি রাজনীতি বা এক দ্বি-দলীয় রাজনীতি গড়ে তুলতে পরিকল্পিত প্রয়াস চালাচ্ছে যাতে বামপন্থিদের বিশেষ করে কমিউনিস্ট দের ক্রমান্বয়ে  প্রান্তিক দিকে ঠেলে দেওয়া যায়। এমন কি সাম্রাজ্যবাদও এই বাংলার মাটিতে যে বাইনারি ষড়যন্ত্র তাকে প্রতিষ্ঠা করতে তাদের ও মদত আছে এর বিরুদ্ধেও বাংলার মাটিতে লড়াই চলছে।

সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে  RSS বিজেপি সরকারকে পরাস্ত করার লড়াই।  বাংলার মাটিতে যেহেতু RSS, BJP-কে পরাস্ত করা সম্ভব না যদি তৃণমূল কে পরাস্ত না করা যায়।  তাহলে বাংলার মাটিতে দুই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চলছে।  এই শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইকে সাফল্য অর্জন   করতেই হবে।  ধর্মনিরেপেক্ষ ভারত গণতন্ত্র তাকে রক্ষা করা বহুত্ববাদী ভারত কে রক্ষা করা এবং আগামি দিনে শোষনবিরোধী সংগ্রামকে পুষ্ট করতে উন্নত ভারত গড়ে তোলা তাকে সফল করতে এই মুহুর্তের লড়াই এবং সেই লড়াইয়ের সাফল্য এটাই জনগ্ণের প্রত্যাশা।  এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই। এক নতুন দুনিয়া গড়বার লড়াইয়ে নিয়োজিত কমিউনিস্টরা ভারতের বুকে এক শোষণহীন সমাজ গড়ে তুলতে   দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। প্রতিকূলতা বা পরাজয় বা সাময়িক ব্যর্থতা কখনো কমিউনিস্টদের হতাশ করে না এগুলি থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করেই মূল লক্ষপথে অবিচল থেকে এগিয়ে চলা এটাই তো কমিউনিস্টদের সব থেকে বড়ো বৈশিষ্ট্য। নিশ্চিত ভাবে সেই বৈশিষ্ট্যকে রক্ষা করেই আগামী ভারত সেই আমাদের পূর্বসূরীরা আমাদের যার কল্পনা করেছিলেন। যার স্বপ্ন দেখেছিলেন শোষনহীন উন্নত সমৃদ্ধ ভারত সেই ভারত গড়ে তোলার লড়াই আরো বেশি জেদ দৃঢ়তা নিয়ে পরিচালনা করবই।  পার্টির ১০৪ তম প্রতিষ্ঠাদিবসে এটাই লক্ষ্য।

Spread the word