Site icon CPI(M)

CC Meeting: Press Communique

CPIMCC

কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক – প্রেস বিবৃতি

তারিখঃ সোমবার, ৯ই অগাস্ট – ২০২১

বিগত ৬ই অগাস্ট থেকে গতকাল ৮ই অগাস্ট অবধি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠক নিম্নলিখিত প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে –  (ক) কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু ও পুদুচ্চেরি এবং অসমের বিধানসভা নির্বাচনের পর্যালোচনা, (খ) রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা এবং দেশজোড়া প্রচার কাজের আহ্বান সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত এবং (গ) সিপিআই(এম)-এর ২৩তম পার্টি কংগ্রেস আয়োজন।

বিধানসভা নির্বাচন সম্পর্কিত পর্যালোচনা

এই দফার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বিজেপির জন্য কেরালা, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গে একটি ধাক্কা বলা যায়। আসামে, বিজেপি’র বিরোধী মহাজোটের চেয়ে মাত্র ০.৭৮ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে তারা সেই রাজ্যে সরকার ধরে রাখতে পেরেছে। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে তীক্ষ্ণ করার যাবতীয় অপচেষ্টা, অভূতপূর্বরুপে বহু অর্থ ব্যয়, কেন্দ্রীয় সংস্থাসমুহকে  আগ্রাসী কায়দায় নিজেদের স্বার্থে অপব্যবহার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা – এমনকি বিরোধী দলসমূহ এবং তাদের নেতৃত্বকে ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়া সত্বেও, বিজেপি এবং তার জোটসঙ্গীরা জনগণের সমর্থন পেতে ব্যর্থ, এই কারনেই তারা কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ুতে দৃষ্টান্তমূলকভাবে পরাজিত হয়েছে।

কেরালা: কেরালায় বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের অসাধারণ ফলাফলের প্রশংসা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এলডিএফ-জোটের প্রতি আস্থা জানানোয় এবং অভূতপূর্বভাবে এলডিএফ সরকারকেই পুনরায় নির্বাচিত করার জন্য কেরলের জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি। গত বিধানসভা নির্বাচনের চেয়েও এবছর এলডিএফের ফলাফল ভালো হয়েছে।

নির্বাচন পূর্ববর্তী এলডিএফ সরকারের বিবিধ কর্মক্ষমতা, বিকল্প নীতি অনুসরণ, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় গৃহীত পদ্ধতি, মহামারীর মোকাবিলায় অনুকরণযোগ্য পদ্ধতির ব্যবহার, জনগণের সব অংশের জন্য কল্যাণমূলক পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ এবং ধর্মনিরপেক্ষ, কেরলের সমাজে প্রচলিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সচেতন চর্চায় আস্থাশীল হয়েই কেরলের জনগণ তাদের ভোট দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ: পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন জিততে সমস্ত বিজেপি বিপুল অর্থশক্তি এবং যাবতীয় ষড়যন্ত্র করা সত্ত্বেও ধাক্কা খেয়েছে। বাংলার মানুষ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সিপিআই (এম) এবং বামফ্রন্টের জন্য, এই নির্বাচনে ফলাফল ধ্বংসাত্মক হয়েছে। ১৯৪৬ সালের পর এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সংসদে কোনো কমিউনিস্ট নেই। যথাযোগ্য আত্ম-সমালোচনায় নিজেদের কাজের পর্যালোচনা অনুযায়ী এই ফলাফল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবে এবং সেই পর্যালোচনা বাস্তবায়িত করবে।

তামিলনাড়ু: এই রাজ্যে ডিএমকে নেতৃত্বাধীন বিজয়ী ফ্রন্টের অংশ হিসাবে, দুজন সিপিআই (এম) বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন।

আসাম: আসামে বিজেপি বিরোধী ‘মহাজোট’ -এর সাথে আসন সমন্বয় করে, সরভোগ কেন্দ্র থেকে সিপিআই(এম)’এর  এমএলএ জিতেছেন। দশ বছর পরে আসামের বিধানসভায় পার্টির প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।

এই সকল রাজ্যে, নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে পার্টিকে যে পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে হবে সেগুলি নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্যসমাপ্ত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে এবং রাজ্য কমিটিগুলিকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট রূপরেখা জানানো হয়েছে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা

কোভিড মহামারী পরিস্থিতি: দেশে করোনা সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছেই। পুনরায় বিপর্যয়কর ক্ষমতাবিশিষ্ট সংক্রমণের তৃতীয় তরঙ্গ প্রতিরোধ করতে টিকা দেওয়ার হার দ্রুত বৃদ্ধি করাই একমাত্র অপরিহার্য পন্থা। বর্তমানে দেশে মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মাত্র ১১.৩ শতাংশ টীকার দুটি ডোজ পেয়েছে এবং এই ১১.৩ শতাংশ সহ  ৪০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক একটি ডোজ পেয়েছে। এই হারে টিকাকরন চললে, বছরের শেষে দেশের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়ার লক্ষ্য পূরণ কার্যত অসম্ভব। টিকা দেওয়ার ধীর গতি মূলত ভ্যাকসিনের ভাঁড়ারে অভাবের কারণে। নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিদিন এক কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে সারা পৃথিবী থেকেই ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে হবে এবং টিকাকরণ অভিযানকে আরও জোরদার করতে হবে।

কোভিড সংক্রমণ রোধে অব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক মন্দার গভীরতা বৃদ্ধি: কোভিড সংক্রমণ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং তাদেরই গৃহীত নীতির ফলে জাতীয় অর্থনীতির ধ্বংসসাধনে দেশের জনগণের উপর মারাত্মক দুর্দশা চেপে বসেছে। বেকারত্ব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশজূড়ে দারিদ্র্যের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি ঘটেছে, মুদ্রাস্ফীতিও ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। স্বল্প আয়যুক্ত পরিবারগুলির উপরেও এখন ভয়াবহ বেকারত্ব চেপে বসেছে এবং নিত্যপ্রয়োজনিয় পণ্যের সাথে অন্য সব কিছুরই লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করেছে এবং পরিবারগুলিকে ক্রমাগত ঋণের জালে ঠেলে দিচ্ছে।

এই সকল সমস্যা সমাধান এবং জনগণের বিপদে ত্রাণ দেওয়ার পরিবর্তে, কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাপক বেসরকারিকরণের মাধ্যমে দেশের জাতীয় ও জনগণের সম্পদসমূহে লুণ্ঠন চালিয়ে যাচ্ছে। নারী, দলিত ও আদিবাসীদের উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণের ঘটনাগুলিতে দেশজূড়ে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে আরও তীক্ষ্ণ করছে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকেও হরণ করছে।

সংসদীয় ব্যাবস্থার ভাঙ্গন: দেশ ও জনগণের এহেন অভূতপূর্ব সমস্যাসংকুল পরিস্থিতিতে, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহারে নজরদারি চালানোর বিষয়ে সংসদে আলোচনা অবধি করতে চায়না, এতে সংসদীয় প্রক্রিয়া গুরুতরভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সংবিধানের নির্দেশ অনুযায়ী সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে দেশের সরকার বাধ্য, অথচ কেন্দ্রীয় সরকার সেই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মানতে চাইছে না, অস্বাভাবিক আচরণ করছে।

একইসাথে, সংসদীয় কার্যকলাপ ব্যাহত করে এই সরকার বিভিন্ন বিলকে আইন হিসাবে প্রণয়ন করে চলেছে। এই সমস্ত আইন জনগণের স্বার্থবিরোধী এবং ভারতের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের পক্ষে ক্ষতিকর। কেন্দ্রীয় সরকারের এহেন আচরণ একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং তাদের এইসব আচরনকে আগামিদিনে প্রতিহত করা হবে।

পেগাসাস স্পাইওয়্যার নজরদারি: ভারত সরকার জনজীবনে নজরদারির জন্য যে কায়দায় পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করছে তা খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা। সরাসরি একটি সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করে চলেছে সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার কিংবা তাদের কোন সংস্থা কি পেগাসাস সামরিক স্পাইওয়্যার ব্যবহারের জন্য কোন এজেন্সি মারফত ইজরায়েলি সংস্থা – এনএসও-র (সামরিক উদ্দ্যেশে সাইবার নজরদারি চালানোর জন্য প্রখ্যাত সংস্থা) সাথে চুক্তিবদ্ধ? এর জবাব সরকারকে অবশ্যই দিতে হবে এবং নজরদারি চালানোর প্রশ্নে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। এই ধরনের নজরদারি শুধু মানুষের গোপনীয়তার মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘনই নয় বরং এই কাজ ভারতীয় গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের উপরে এক আক্রমণ স্বরূপ। নজরদারিতে থাকা ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন একাধিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সাংবাদিক, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারক এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, সিবিআই’র একজন প্রাক্তন প্রধান এমনকি প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারও। এ এক অশুভ সংকেত। ব্যক্তির অধিকার ব্যাতিরেকেও বলা যায় নিজস্ব সাংবিধানিক দায়িত্বসমূহ পালনের মধ্যে দিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য বজায় রাখতে কর্তব্যরত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের উপরে এধরণের নজরদারি কার্যত আক্রমণ।

অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এক উচ্চ-ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত হওয়া উচিত যাতে সত্য প্রকাশ পায় এবং দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পায়।

দেশজূড়ে ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ

ঐতিহাসিক কিষাণ আন্দোলন: আট মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের কৃষকদের এমন অভূতপূর্ব সংগ্রাম স্বাধীন ভারত কখনো দেখেনি। কৃষি-আইন বাতিল এবং উৎপাদন খরচের C2+50 শতাংশ হারে ফসল বিক্রির আইনি অধিকারের দাবিতে কৃষকরা লড়াই করছেন।

এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ভারতীয় জনগণের এক বিশাল অংশের সংহতি আদায় করেছে এবং এখনো সেই সমর্থন অব্যাহত রয়েছে। সংসদের চলতি অধিবেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সমান্তরালরুপে চলমান ‘কিসান সংসদ’ই কৃষকদের ন্যায্য দাবির প্রতি জনগণের ব্যাপক সমর্থনকে তুলে ধরেছে।

ট্রেড ইউনিয়ন, কিষাণ সভা এবং কৃষি শ্রমিক সংগঠনসমূহের যৌথ প্রতিবাদ: ট্রেড ইউনিয়ন, কিষাণ সভা এবং ক্ষেতমজুর সংগঠনগুলি একত্রিত হয়ে দেশের শ্রমজীবী ​​মানুষদের প্রধান অংশসমূহ নিজেদের ন্যায্য অধিকার রক্ষার লড়াইকে শক্তিশালী করতে এই আন্দোলন এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। দেশের সম্পদ রক্ষার্থে সবাই একজোট হয়ে লড়াই করছেন।

শ্রমিক শ্রেণীর লড়াই: বিভিন্ন সরকারি সংস্থাতেই বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে বড় আকারের প্রতিবাদ ও সংগ্রাম সংঘটিত হচ্ছে। জিআইসি কর্মচারীরা সারা দেশে ৪ঠা আগস্ট সম্পূর্ণ ধর্মঘট করেছে। এই প্রথমবার বিদ্যুৎ কর্মচারীরা আগামীকাল ১০ই আগস্ট কেন্দ্রীয় ধর্মঘটের ঘোষণা করেছে।

জনগণের অন্যান্য অংশের লড়াই: ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়াইতে বিভিন্ন সরকারী বিভাগে শূন্যপদগুলি পূরণের দাবি জানিয়েছে দেশের তরুণ সমাজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি দ্রুত খোলার এবং জনশিক্ষা জোরদার করার শর্ত তৈরির দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইতে যুক্ত হবার সাথেই দুর্দশাগ্রস্থ মানুষকে ত্রাণ বিতরণ করার কাজে দেশজুড়ে মহিলারা রাস্তায় নেমে এসেছেন ।

ত্রিপুরা: আক্রমণ বন্ধ করতে হবে

ত্রিপুরায় সিপিআই(এম) কার্যালয় এবং কর্মীদের উপরে বিজেপি গুন্ডাদের লাগাতার হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। মানিকভান্ডারে গত সপ্তাহেই পার্টির কামালপুর মহকুমা অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে, কামালপুরের একটি স্থানীয় কার্যালয়ে হামলা চলার ঘটনায় সিপিআই(এম) নেতা রঞ্জিত ঘোষ গুরুতর আহত হন। বেলোনিয়া এবং জিরানিয়া মহকুমা এলাকাতেও পার্টির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

অতীতে ত্রিপুরায় রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সিপিআই(এম)’র পক্ষে প্রতিনিধিদল এইসব হামলার বিষয়ে সাক্ষাৎে আলোচনা করেন। তারা আশ্বাস দেন এধরনের হিংস্র আচরন চলতে দেওয়া হবে না। কিন্তু, তা সত্ত্বেও, সন্ত্রাসের রাজত্ব অব্যাহত রয়েছে।

গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা এবং বিরোধীদের উপর এহেন নির্মম আক্রমণের অবসান ঘটাতে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ত্রিপুরায় রাজ্য সরকারের প্রতি দাবী জানাচ্ছে।  

টোকিও অলিম্পিকস

টোকিও অলিম্পিকসে যারা দেশের হয়ে পদক জিতেছেন তাদের সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছে সিপিআই(এম)-এর কেন্দ্রীয় কমিটি। এই প্রথম ভারত অলিম্পিকের অ্যাথলেটিক্স বিভাগে পদক জিতেছে, এই স্বর্ণপদক প্রাপ্তি এক ঐতিহাসিক জয়। পুরুষদের হকি দল ব্রোঞ্জ পদক জেতার সময়, মহিলা হকি দল চতুর্থ স্থান অর্জনের জন্য উত্সাহব্যাঞ্জক সক্ষমতা প্রদর্শিত করেছে। এই ঘটনা সত্যই আনন্দদায়ক যে ছটি পদক বিজয়ীর মধ্যে তিনজনই মহিলা খেলোয়াড়।

এই দুর্দান্ত জয়গুলি সত্ত্বেও, পদকপ্রাপ্তির স্বল্পতা প্রমান করে আমাদের দেশে খেলাধুলা কতটা অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। খেলাধুলার সুবিধাবৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলিকে যথাযথ সহায়তা দিতে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারেরই উচিত এক সুচারু নীতি প্রণয়নের।

জাতিবিদ্বেষের কলঙ্কময় কার্যক্রমসমূহের নিন্দা

হরিদ্বারে মহিলা হকি খেলোয়াড় বন্দনা কাটারিয়ার বিরুদ্ধে বর্ণবাদী কুৎসা রটানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ।

ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী

কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্টি ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী পালন করবে স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্টদের ভূমিকা তুলে ধরে। আধুনিক ভারত গঠনের ভাবনা (আইডিয়া অব ইন্ডিয়া)-কে একীভূত করতে কমিউনিস্ট পার্টির অবদান; স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশদের সাথে আরএসএসের সহযোগিতা; এবং বর্তমান ভারতে সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক-সাধারণতন্ত্রের যেভাবে ভয়াবহ অবমাননা চলছে সেই বিষয়গুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সিপিআই(এম)-এর ২৩তম পার্টি কংগ্রেস

২০২২ সালের এপ্রিল মাসে কেরলের কান্নুরে পার্টির ২৩তম কংগ্রেস আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। মহামারীর পরিস্থিতি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনেই এই আয়োজন সম্পূর্ণ হবে।

কেন্দ্রীয় কমিটির দাবিসমূহ

নিম্নোক্ত বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে বাস্তবায়িত করতে হবে:

১) বিশ্বজূড়ে টিকা সংগ্রহ এবং অবিলম্বে বিনামূল্যে সার্বজনীন টিকাকরণ অভিযানকে গতি দিতে হবে; যারা কোভিডের কারণে জীবন হারিয়েছেন তাদের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করতে হবে।

২) আয়কর সীমার বাইরে থাকা সব পরিবারকে প্রতি মাসে ৭৫০০ টাকা দেওয়ার কাজে নগদ স্থানান্তর বাস্তবায়িত করতে হবে।

৩) অভাবগ্রস্থ পরিবারগুলির দৈনন্দিন ব্যবহারের সকল প্রয়োজনীয় দ্রব্য সম্বলিত খাদ্য কিট বিনামূল্যে বিতরণ করতে হবে।

৪) সমস্ত পেট্রোলিয়াম পণ্যের উপর কেন্দ্রীয় আবগারি শুল্কের বৃদ্ধি প্রত্যাহার সহ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৫) কৃষি আইন বাতিল এবং এমএসপি’তে বিক্রি করার অধিকার আইন প্রণয়ন করতে হবে যার পরিমাণ উৎপাদন খরচের C2+50 শতাংশ হবে।

৬) সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণ বন্ধ করে শ্রম কোড বাতিল করতে হবে।

৭) হরতাল এবং মজুরি সংক্রান্ত দর কষাকষির মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে শ্রমিকদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

৮) ঋণ নয়, এমএসএমই-গুলির পুনরুজ্জীবনের জন্য আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে।

৯) মজুরি কমপক্ষে দ্বিগুণ করতে হবে, ২০০ দিনের জন্য কাজের গ্যারান্টি সহ MGNREGA প্রকল্পকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করতে হবে।

১০) একইভাবে শহুরে কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রোগ্রাম আইন প্রনয়ন করতে হবে।

১১) দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে উন্নত করতে কর্মসংস্থান ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির জন্য সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে; সরকারি চাকরিতে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে।

১২) প্রাথমিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি পুনরায় খোলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে শিক্ষক, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

১৩) অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের তত্বাবধানে মানুষের উপরে নজরদারির জন্য পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহারের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।

১৪) রাফাল চুক্তির উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হতে হবে – আগের অর্ডার বাতিল করে নতুনভাবে উচ্চ মূল্যসম্পন্ন বরাত ঘোষণা করতে হবে।

১৫) ভীমা কোরেগাঁও মামলা এবং সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলনে দানবীয় ইউএপিএ-তে গ্রেফতার হওয়া সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বান

উপরোক্ত দাবিসমূহের ভিত্তিতে, কেন্দ্রীয় কমিটি মহামারী এবং সংশ্লিষ্ট কারনে লকডাউনের ফলে স্থানীয় অবস্থার উপর নির্ভর করে সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য কমিটি এবং তার নীচে সক্রিয় সকল পার্টি ইউনিটকেই দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং সংগ্রাম সংগঠিত করার আহ্বান জানাচ্ছে। এক মাস ব্যাপি এই প্রতিবাদমূলক কর্মকান্ডের বিস্তারিত সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট রাজ্য কমিটিগুলি সিদ্ধান্ত নেবে।

উপরোক্ত দাবিসমূহের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক জনগণের অন্যান্য সকল অংশকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে।

দেশব্যাপী প্রতিবাদমূলক কর্মসূচী পালনসহ ‘ভারত ছাড়ো’ দিবসকে পালনের জন্য সম্মিলিত কিষাণ মোর্চার দেশব্যাপী আহ্বানে সিপিআই(এম) ইতিমধ্যেই সমর্থন জানিয়েছে।

Spread the word