২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর। কনকনে শীতের রাতে কোচবিহার এয়ারপোর্ট ময়দানে বিশাল জনসমাবেশের কপি পাঠিয়ে অফিসে ফোন করতেই অতনুদা বললো, ‘তুমি লাইনে থাকো, অভীক কথা বলবে।’ অভীকদা বললো, ‘তোমাকে তো কখন থেকে খুঁজছি, তুমি এখনই জ্যোতি বসুর কাছে যাও। উনি একটা বিবৃতি দেবেন।’
২০০০ সালের ৬ নভেম্বর জ্যোতিবাবু মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অবসর নেওয়ার প্রথমবার উত্তরবঙ্গ সফর। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার, তিন জেলাতেই জনসভাগুলিতে উপচে পড়া ভিড়। কোচবিহার এয়ারপোর্ট ময়দানে সেদিন প্রায় তিন লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। পার্টির জেলা সম্পাদক চন্ডী পাল আমাকে মঞ্চে ডেকে সমাবেশ দেখিয়ে বললেন, ‘কি, এটা মিনি ব্রিগেড বলে মনে হচ্ছে?’ সত্যিই, মনে হচ্ছিল ব্রিগেডের মতই দুকুল ছাপানো মানুষ এসেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই কপি লিখতে প্রায় রাত দশটা। তারপর ঠান্ডার মধ্যে ফ্যাক্সের জন্য দৌড়ানো। ফ্যাক্স পাঠিয়ে কনফার্ম করার জন্য ফোন করতেই এই বার্তা পেলাম। মনে রাখা ভালো, তখন মোবাইল সহজলভ্য হয়নি।
জ্যোতিবাবু ছিলেন কোচবিহার সার্কিট হাউসে। দীপকদা(হোড়রায়)’কে নিয়ে দৌড়োলাম সেখানে। পুলিশের বাধা পেরিয়ে জয়কৃষ্ণ ঘোষের কাছে যেতেই বললেন, ‘তোমাকে তো অনেকক্ষণ ধরে খোঁজাখুঁজি হচ্ছে। উনি তো এইমাত্র শুয়ে পড়লেন।’ তারপর কী ভেবে বললেন, ‘দাঁড়াও, এখনও হয়তো শুয়ে পড়েননি।’ তারপর জ্যোতিবাবুর ঘরে গিয়ে ডাকলেন। এক মিনিটের মধ্যেই দরজা খুললেন তিনি। জয়দা বললেন, ‘এই যে গণশক্তি থেকে এসেছে, আপনি খুঁজছিলেন বলে।’ জ্যোতিবাবু বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি দিল্লিকে জানিয়ে দিয়েছি। লিবেরহান কমিশনে আমি সাক্ষ্য দিতে যাবো।’ সংবাদসংস্থা মারফত সে খবর পরদিন দেশের সমস্ত সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনার পরেই তা তদন্তের জন্য গঠিত হয়েছিল বিচারপতি লিবেরহানের নেতৃত্বে এক সদস্যের তদন্ত কমিশন। কিন্তু তদন্তে অযথা কালক্ষেপ হচ্ছিল। পরে বাজপেয়ী সরকারের আমলে তা আরও বিলম্বিত হয়। ২০০০ সালের ৬ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে এজি নুরানির লেখা একটি বইয়ের উদ্বোধন করতে গিয়ে বসু তাঁর ভাষণে সাম্প্রদায়িকতার বিপদ সম্পর্কে বেশ কিছু কথা বলেছিলেন। সেই ভাষণেই তিনি বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রসঙ্গ টেনে জানান, তার ঠিক পরে কলকাতায় উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, তখন বিজেপি নেতা কল্যাণ সিংয়ের বক্তৃতার ক্যাসেট তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই লিবেরহান কমিশন ডেকে পাঠায় বসুকে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মাসদুয়েক বাদে ১৯৯৩ সালের ২ফেব্রুয়ারি কলকাতায় একটি সভায় যে ভাষণ দিয়েছিলেন কল্যাণ সিং, ক্যাসেটটিতে তা রেকর্ড করা হয়েছিল। ঐ ভাষণে বাবরি মসজিদ ধ্বংস সম্পর্কে কল্যাণ সিং বলেছিলেন, ‘‘ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছাড়া কোনও বিস্ফোরক ব্যবহার না করে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে এতবড় ধ্বংস কাণ্ড সম্পন্ন করা যেত না। কোনও ঠিকাদারকে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হলে তাঁর অন্তত দেড় মাস সময় লাগতো।’’
১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনার সময় দিল্লিতে ছিল কংগ্রেসের নরসিমা রাও-র সরকার। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তখন ছিলেন কংগ্রেসের সাংসদ ও দিল্লির মন্ত্রী। যখন বাবরি মসজিদ ভাঙার উন্মত্ত তান্ডব টেলিভিশনে সম্প্রচার হচ্ছে, তখন গোটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা নীরব ও স্থবির হয়ে বসেছিল। এখন অনেক বুলি দিলেও মমতা ব্যানার্জিও টুঁ শব্দটি করেননি। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বারবার নরসিমা রাওকে অনুরোধ করেছিলেন ব্যবস্থা নেবার জন্য। ঘটনার দু’দিন আগেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন জ্যোতি বসু। সিপিআই(এম) ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের বিরোধী হলেও জাতীয় সংহতির স্বার্থে ব্যতিক্রমী হিসেবে তিনি সেদিন ওখানে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করতে বলেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর মন্ত্রিসভা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। দেশের মানুষ জানতেন মসজিদ ভাঙা হবে, অথচ মন্ত্রিসভা জানতো না!
বাবরি মসজিদ ভাঙার তদন্তে গঠিত লিবেরহান কমিশনে দুদিন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। ২০০১সালের ২৯জানুয়ারি এবং ১৫মার্চ। সাক্ষ্য দিতে গিয়ে জ্যোতি বসু বলেছিলেন, ‘‘…বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দু’দিন আগে আমি প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে বলেছিলাম, চারদিক দিয়ে উদ্বেগজনক সব খবর আসছে। করসেবকরা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। তবে উনি আমায় বলেন, কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক আছে, সেখানে পরিস্থিতি আলোচনা করে তবে কেন্দ্রের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মসজিদের কাঠামো মাটিতে মিশে গেল, মানুষ দেখল তা। জানা গেছে বেশ কয়েকজন বিজেপি শীর্ষনেতা ঘটনাস্থলে ছিলেন। এখন তাঁদের কয়েকজন বিজেপি সরকারের মন্ত্রিসভাতেও রয়েছেন। এরপরে যখন হরকিষেণ সিং সুরজিৎ, তখন সিপিআই(এম)-র সাধারণ সম্পাদক, আর আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম তখন জিজ্ঞাসা করি, কেন মসজিদ রক্ষায় কোনও ব্যবস্থা নিলেন না। উনি শুধু বললেন, আমি কী করে একজন মুখ্যমন্ত্রীকে (উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং) অবিশ্বাস করবো। উনি আমায় কথা দিয়েছেন সেরকম কিছু হবে না।’’
হয়েছিল ঠিক উলটো।
লিবেরহান কমিশন ৬৮জন বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কর্মকর্তাকে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পিছনে মূল মদতদাতা বলে চিহ্নিত করেছিল। এর মধ্যে ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলীমনোহর যোশী, উমা ভারতী, সাধ্বী ঋতম্ভরা, অশোক সিংঘল, গিরিরাজ কিশোর প্রমুখ। বাজপেয়ী ছাড়া আর সবারই বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিটও দিয়েছিল।
বাবরি মসজিদ ধ্বংস ঠেকাতে জ্যোতি বসু এবং হরকিষেণ সিং সুরজিৎ যে এমনকি অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং লালকৃষ্ণ আদবানির সঙ্গেও দেখা করেছিলেন, যেকথা তিনি লিবেরহান কমিশনকে ২০০১সালেই জানিয়েছিলেন। যদিও বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি তাঁর লেখা ‘মাই লাইফ, মাই কান্ট্রি’ বইটি সম্পর্কে সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জ্যোতি বসুর সঙ্গে তাঁর এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ‘গোপন’ বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন। ২০০৯সালের ২৫মার্চ আদবানির এই সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করা হয়। সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হওয়ার পর এনিয়ে নানারকম বিশ্লেষণ প্রকাশিত হতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই জ্যোতি বসুর কাছে এবিষয়ে ‘গণশক্তি’র পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জ্যোতি বসুর সেই একান্ত সাক্ষাৎকার ২০০৯ সালের ৩১মার্চ ‘গণশক্তি’-তে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে এই সাক্ষাৎকারকে উল্লেখ করে দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
জ্যোতি বসু এই সাক্ষাৎকারে বলেন: ‘‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঠেকাতেই লালকৃষ্ণ আদবানির সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। কিন্তু উনি আমার কথা শোনেননি। আমি ওঁর সঙ্গে একবার বৈঠক করেছিলাম এবং এরমধ্যে কোনো গোপন বিষয় ছিল না। আদবানির বাড়িতেই এই বৈঠক হয়েছিল। ভিপি সিং তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। অয্যোধায় বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির গড়ার জন্য আদবানি তখন রথযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই সময় ভিপি সিং একদিন আমাকে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কথা বলে এই রথযাত্রা বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নিতে বলেন। আমি পার্টির সঙ্গে কথা বলেই লালকৃষ্ণ আদবানির সঙ্গে দেখা করতে যাই। আদবানির বাড়িতেই এই বৈঠক হয়েছিল।
বৈঠকে আমি আদবানিকে বললাম, আপনার রথে তো রামচন্দ্রের ছবি যেমন থাকছে, তেমনি দলের পতাকাও থাকছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে এই রথ যাওয়ার কথা। এর ফলে সেসব জায়গায় একটা অশান্তির পরিবেশ তৈরি হতে পারে, সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে, দাঙ্গা বাঁধতে পারে। এসব করবেন না, বরং আলাপ-আলোচনা করুন। কিন্তু আদবানি আমার কথা শোনেননি। উনি রথযাত্রার তোড়জোড় চালিয়ে যেতে লাগলেন।”
“তখন ভিপি সিং-র কথা বলে ঠিক হলো কিভাবে ওদের নিরস্ত করা যায়, তার জন্য আবার আলোচনা হবে। আবার বৈঠক হলো, তবে এবার অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে। আদবানি পরের বৈঠকে ছিলেন না। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি ছিলেন বীরেন জে শা, পরে উনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালও হয়েছিলেন, ওঁর বাড়িতে এই বৈঠক হয়। ভিপি সিং, বাজপেয়ী এবং আমি এই বৈঠক করি। কিন্তু তাতেও রথযাত্রা থামানো যায়নি। আদবানির ‘রামরথ’ যেখান দিয়ে গেছে, সেখানেই দাঙ্গা হয়েছে, কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। আমরা সেটাই ঠেকাতে চেয়েছিলাম।”
“১৯৯২ সালের ৬ডিসেম্বর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এলকে আদবানি। ওঁর উপস্থিতিতেই বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা ঘটে। আদবানিসহ এনডিএ সরকারের তিনজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে এই মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। আমি এজন্যই বিজেপি-কে অসভ্য, বর্বর বলি।”
“বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীদের সভায় আমরাই বলেছিলাম যে প্রয়োজনে সংবিধানের ৩৫৬ধারাও প্রয়োগ করতে, যদিও আমরা এই ধারা প্রয়োগ পছন্দ করি না। তখন নরসিমা রাও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পরে আমি এবং কমরেড সুরজিৎ, উনি তখন পার্টির সাধারণ সম্পাদক, দুজনেই প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করেও বলি যে খুবই খারাপ খবর আসছে, আপনি দ্রুত ব্যবস্থা নিন। উনি আমাদের বললেন, আমার পার্টির মিটিং আছে, সেখানে আলোচনা করবো। কিন্তু কিছুই করলেন না। বাবরি মসজিদ ভাঙা পড়লো।”
“পরে এজন্য একটা কমিশন হয়েছিল, লিবেরহান কমিশন, সেখানে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আমাকেও ডেকেছিল। আমি বিচারপতিকে যা বলার বললাম, আর আমি সঙ্গে কিছু ক্যাসেট নিয়ে গিয়েছিলাম। ভাঙার পর কলকাতায় এসে উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং একটা মিটিং করেছিল। সেখানকার বক্তৃতা পুলিশকে রেকর্ড করে রাখতে বলেছিলাম। আমি বিচারপতিকে বললাম, ওরা ভাঙার কথা কিরকম গর্বের সঙ্গে বলছে, আমার কাছে তার ক্যাসেট আছে, সেটা আপনি শুনুন।”
জ্যোতিবাবু সেদিনও বলেন এবং অসংখ্য জনসভায় বলেছেন, ‘‘অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন উনি একবার কলকাতায় এসে আমাকে রাজভবনে ডাকলেন। আমি যেতে অন্যান্য কথার পর উনি আমাকে বললেন, ‘‘আমার দলের কর্মীরা বলছে, আপনি নাকি জনসভায় আমাদের ‘অসভ্য, বর্বর’ বলছেন। আমি ওঁকে বললাম, আমি তো কাউকে ব্যক্তিগতভাবে বলছি না, কিন্তু আপনার দল যা করছে, দাঙ্গা করছে, গুজরাটে যা হলো, মুসলিমদের খুন করছে, এখন তো খ্রীশ্চানদেরও মারছে, এসব অসভ্যতা, বর্বরতা ছাড়া আর কি? বাজপেয়ীকে আমি বললাম, দিল্লিতে ফিরে আপনি আমাকে এর উত্তর পাঠাবেন। কিন্তু সেই উত্তর আমি আজো পাইনি।’’
বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রীর মুখের ওপর তাঁর দল যে একটা ‘অসভ্য, বর্বর’ দল, তা বলতে পেরেছিলেন কিংবদন্তী জননেতা জ্যোতি বসু। আজ মোদী জমানায় অক্ষরে অক্ষরে দেশের মানুষ টের পাচ্ছেন এই অমোঘ সত্যটি কতটা নির্মম!
সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি যে কঠোর ও নির্মম ছিলেন, তা তাঁর গোটা জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন জ্যোতি বসু। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনাতেই এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৮ সালের ৩০জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধী হিন্দুত্ববাদীদের হাতে নিহত হওয়ার পর সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাতেও শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ১৯৪৮সালের ১০ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় এবিষয়ে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করা হলে সেদিন তরুণ কমিউনিস্ট সদস্য জ্যোতি বসু আলোচনা করতে গিয়ে বলেছিলেন: ‘‘সারা দেশের সঙ্গে আমার পার্টিও গান্ধীজীর হত্যায় শোকাহত।….গভীর দূরদৃষ্টিতে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে, সাম্প্রদায়িক হানাহানি আবার একবার পরাধীনতার নয়া সাম্রাজ্যবাদী শৃঙ্খল আমাদের পায়ে পরিয়ে দেবার পথ প্রশস্ত করবে।….সাম্প্রদায়িকতার অসূয়াপরায়ণ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণায় আমরা দায়বদ্ধ। আমাদের মধ্যে তিক্ততার বীজ বপন করেছে জঘন্য যে শক্তি, তার প্রতি ঘৃণায় আমরা দায়বদ্ধ; সাধারণ মানুষকে নিষ্পেষণের চেষ্টা করছে যারা তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ভেতরে কিংবা বাইরে মানুষের পবিত্র ক্রোধ জাগিয়ে তুলতে আমরা দায়বদ্ধ। তাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করবো। সত্যিকারের মুক্ত এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় আমরা সকলেই সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। আমার অপেক্ষা করবো। লক্ষ্য রাখবো, এই চূড়ান্ত ট্র্যাজেডির পরে আজ পর্যন্ত সব কাজেই অকৃতকার্য কংগ্রেস সরকারের মনোভাবে কোনো পরিবর্তন আসে কিনা। নিছক প্রার্থনায় নয়, এমনভাবে তারা কাজ করে কিনা যা হবে গান্ধীজীর স্মৃতির উপযুক্ত স্মারক।’’