Site icon CPI(M)

Union Budget 2025-26: A Cruel Betrayal of the Indian People

PB Statement

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পলিট ব্যুরো বিবৃতি

১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ভারতের জনসাধারনের চাহিদার নিরিখে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেট এক নির্মম বেইমানি। জাতীয় অর্থনীতির বহুবিধ ক্ষেত্রেই সমস্যার মূল কারণ হল চাহিদার ঘাটতি। ব্যাপক আকারের বেকারত্ব এবং কমতে থাকা  মজুরির কারণে জনসংখ্যার এক বড় অংশের হাতেই খরচ করার মতো অর্থ নেই, তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এই সংকটের সমাধান করার পরিবর্তে অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করার চেষ্টায় মোদী সরকার বাজেট ঘোষণায় সরকারী ব্যয় কমানোর সাথে সাথে জনগনের একটি ক্ষুদ্র অংশ, যারা উচ্চ আয় করেন তাদের জন্য কর হ্রাস করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষায় ভারতে শ্রমিকদের মরিয়া ও দুর্দশাগ্রস্থ চিত্রটি স্পষ্ট হয়েছে। সমীক্ষার ফলাফল ইঙ্গিত দিয়েছে গত পাঁচ বছরে জনসাধারণের আয় কমেছে। তা সত্বেও কেন্দ্রীয় বাজেটে সরকারি ব্যয় কমানোর পাশাপাশি ধনীদের ছাড় দেওয়ার উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে, এতে দেশের ধনী ও দরিদ্রের মধ্যেকার বিশাল বৈষম্য আরও বাড়বে। ধনী পরিবার ও বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থাগুলির উপর বাড়তি কর আরোপ করে সম্পদ সংগ্রহ না করে, কর্মসংস্থান বাড়ানো, ন্যুনতম মজুরি নিশ্চিতকরণ সহ জনস্বার্থে সরকারী ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধির বদলে তারা আর্থিক নীতি হিসাবে ঠিক উল্টো পথে চলারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে বেসরকারি বিনিয়োগকে আরও বেশি করে সম্পদ লুটের জন্য উৎসাহ দেওয়া হল। এ কাজে সরকারি সম্পদ এবং সরকারি ব্যয়কেও বেসরকারি পুঁজির সেবায় নিযুক্ত করা হয় যাতে ধনীরা আরও বেশি করে সম্পদ সঞ্চয়ে উৎসাহিত হয়। এবারের বাজেটে সরকার বীমা খাতে ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ এবং বিদ্যুৎক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের প্রস্তাব এনেছে। এই বাজেট ধনীদের দ্বারা ধনীদের জন্য নির্মিত পরিকল্পনা।

২০২০-২১ সাল থেকেই কেন্দ্রীয় বাজেটে জিডিপির সাথে তুলনায় শতাংশের নিরিখে সরকারী ব্যয়বরাদ্দ কমানো চলছে। ২০২৪-২৫ সালে সরকারী ব্যয়ের বাজেট বরাদ্দ ছিল জিডিপি’র ১.৪.৬ শতাংশ, এবারে তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১৪.২ শতাংশ। গতবারের বাজেট বক্তৃতায় বিরাট সব দাবী, পরিকল্পনার নামে সরকারী বরাদ্দ হিসাবে যা ঘোষণা করা হয়েছিল বছরের শেষে হিসাব করে দেখা যাচ্ছে তার চাইতেও এক লক্ষ কোটি টাকা কম খরচ করা হয়েছে। গতবারের বাজেটেও সরকারী বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিল, অপর্যাপ্ত বরাদ্দ হিসাবেও যেটুকু এই সরকার ঘোষণা করে সেটুকুও তারা খরচ করে না।

গত বছর কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে রাজ্যগুলির জন্য বাজেটে মোট যত অর্থ বরাদ্দ ছিল তার চাইতে এক লক্ষ বারো হাজার কোটি টাকা কম দেওয়া হয়। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প খাতে নব্বই হাজার কোটি টাকা এবং অর্থকমিশন সহ অন্যান্য খাতে বাইশ হাজার কোটি টাকার ঘোষিত বরাদ্দ ছাঁটাই করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতেই স্পষ্ট কেন্দ্রীয় বাজেটে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, রাজ্যগুলির সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা চলছে।

এমন কাটছাঁটের ফলে বাজেটে প্রস্তাবিত মূলধনী ব্যয় (ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার) বাবদ খরচ কমেছে প্রায় তিরানব্বই হাজার কোটি টাকা। খাদ্যে ভর্তুকি, কৃষি ও আনুসাঙ্গিক ক্ষেত্র, শিক্ষা, গ্রামোন্নয়ন, সমাজ কল্যান খাতে বরাদ্দ, নগরোন্নয়ন- যাবতীয় খাতেই ঐ বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের কুপ্রভাব পড়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে যে সকল বরাদ্দের ঘোষণা হয়েছে তা অনেকটাই ২০২৪-২৫ সালের সাথে এক। এই পর্বে মূল্যবৃদ্ধি ও জিডিপি’র শতাংশের হিসাবে বলতে গেলে বাজেট বরাদ্দ অচলাবস্থা প্রাপ্ত হয়েছে বলা যায়। গত বাজেটে খাদ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ২.০৫ লক্ষ কোটি টাকা (যদিও সে বরাদ্দ ছাঁটাই করে মাত্র ৭৮৩০ কোটি টাকা খরচ করা হয়), এবারে সেই পরিমাণ গতবারের চাইতে আরও কমে ২.০৩ লক্ষ কোটি টাকা করা হয়েছে। শিক্ষা খাতে গত বাজেটের বরাদ্দ ছিল ১.২৬ লক্ষ কোটি টাকা (একেও পরে কমিয়ে দেওয়া হয়, মাত্র ১১,৫৮৪ কোটি টাকা খরচ হয়), এবারে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ হিসাবে গতবারে চাইতে ১৪,৫৯৬ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে, সাধারণ হিসাবে যা মাত্র ২.৩ শতাংশের বৃদ্ধি, মূল্যবৃদ্ধির হিসাবকে যুক্ত করলে দেখা যাবে বরাদ্দের পরিমাণ কার্যত বাড়েনি। স্বাস্থ্য ও আনুসঙ্গিক খাতেও বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পায়নি। কৃষিক্ষেত্রে গতবারের বাজেট বরাদ্দ ছিল ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা, সংশোধিত বরাদ্দের হিসাবে দেখা যাচ্ছে ঘোষিত বরাদ্দের ১০,৯৯২ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। গতবারের সংশোধিত বরাদ্দের হিসাবে এলপিজি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১৪.৭ হাজার কোটি টাকা, এবারে তা আরও কমে হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা।

দেশের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জীবনরক্ষাকারী অধিকার এমএনরেগা-র জন্য বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় সরকারের ভণ্ডামিই প্রকাশ পায়। এই প্রকল্পে কাজের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া সত্বেও এতে বরাদ্দ আটকে রয়েছে গত বাজেটের বরাদ্দ ৮৬,০০০ কোটি টাকাতেই। এ যে কেবল গ্রামের দরিদ্র মানুষের উপরই নিষ্ঠুর আঘাত তাই নয়, এ হল ১০০ দিনের কাজের আইনি অধিকারের উপর সরাসরি আক্রমণ। কৃষিক্ষেত্রের দুর্দশার মোকাবিলা এবং কৃষক আত্মহত্যা রোধে ফসলের ন্যুনতম সহায়ক মূল্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অথচ সেই দাবির প্রতি এই সরকার খব একটা মনোযোগ দিতে রাজি নয়।

এবারের বাজেটে তফশিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যয়বরাদ্দের উল্লেখ রয়েছে। অথচ সরকারী হিসাবের দিকে নজর দিলেই দেখা যাবে এরা কতদূর অকর্মণ্য। গতবারের বাজেটে তফশিলি জাতির উন্নয়নকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই হয়েছিল ২৭০০০ কোটি টাকা, তফশিলি উপজাতিদের বেলায় সেই ছাঁটাইয়ের পরিমাণ ১৭০০০ কোটি। এক্ষেত্রে যা উল্লেখযোগ্য তা হল গতবারের বাজেটে যে বরাদ্দ ঘোষণা ছিল তাও ছিল প্রয়োজনের নিরিখে অনেকটাই কম। দেশের মোট জনসংখ্যায় শতাংশের নিরিখে তফশিলি জাতি ও উপজাতি মানুষের যে সংখ্যা তার সাথে বরাদ্দের আনুপাতিক সাদৃশ্য থাকা উচিত। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে তফশিলি জাতিদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে মোট সরকারী ব্যয়ের মাত্র ৩.৪ শতাংশ, তফশিলি উপজাতিভুক্ত মানুষের জন্য ২.৬ শতাংশ।  উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য সরকারী বরাদ্দের পরিমাণ কমেছে ১৩০০০ কোটি টাকা, শিশুকল্যাণ খাতের খরচও কমানো হয়েছে। ২০২৩-২৪’র তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে লিঙ্গভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ২০২৫-২৬’র বাজেটেও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে।

এবারের বাজেটে বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা অবধি আয় অবধি প্রত্যক্ষ আয়কর ছাড়ের ঘোষণাকে ‘মধ্যবিত্তের জন্য সহায়ক’ বলে দাবী করা হচ্ছে। এমন ছাড়ের প্রকৃত সুবিধা মধ্যবিত্তের সামান্য অংশই পাবে, দেশের জনসংখ্যার ১ শতাংশেরও কম অর্থাৎ মূলত ধনীরাই এতে লাভবান হবে। এমন ছাড়ের সুবাদে সরকারী রাজস্ব আদায় কমবে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা। আরও যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল এবারে বাজেটে উচ্চ আয় করেন এমন অংশের জন্য কর কাঠামোয় এতটুকু বৃদ্ধি হয়নি, এর ফলে সরকারের রাজস্ব বাবদ যে ক্ষতি হবে, নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্য ঐ করছাড়ের প্রভাবও তার সাথে যুক্ত হবে।        

২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেট মোদী সরকারের দেউলিয়া অবস্থারই প্রতিফলন ঘটায়। এই বাজেট তুলে ধরে যে সরকার ধনী ও কর্পোরেটদের স্বার্থরক্ষায় এতটাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে অর্থনীতির মন্দা মোকাবিলায় তারা কোনোরকম বাস্তবিক নীতি প্রণয়ন করতে অক্ষম। অর্থনৈতিক সংকটের তীব্রতা এবং তার চরিত্র, সরকার ও তাদের অর্থমন্ত্রীর চোখে কোনটাই দৃশ্যমান বলে মনে হচ্ছে না। এরা কার্যত একটি আটকে যাওয়া রেকর্ডের মতো বেজে চলেছে। আর্থিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে আজকের ভারতে মজুরির মহামারীর আগের অবস্থার চাইতেও নীচে নেমে গেছে। একই সময়ে চাহিদার ঘাটতি দেখা দেওয়ায় সাধারণ আর্থিক বৃদ্ধিও ক্রমশ ধীর হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারী ব্যয় সংকুচিত করা, ধনীদের থেকে প্রয়োজনের চাইতে কম হারে কর আদায়, বেসরকারী-কর্পোরেট ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে পাশবিক মনোবলের যোগান দেওয়ার মতো বিভিন্ন সরকারী পদক্ষেপগুলি দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার নিরসনে কিংবা বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানকে বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে না। ২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট আসলে সেই আর্থিক নীতির সাম্প্রতিক ভাষ্য যা সমস্যার সমাধানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

মোদী সরকারের এই জনস্বার্থ বিরোধী বাজেটের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করার জন্য পলিট ব্যুরো পার্টির সমস্ত ইউনিটকে সক্রিয় হতে আহ্বান জানাচ্ছে।

Spread the word