Site icon CPI(M)

Supreme Court Judge Arun Mishra Hailed Narendra Modi

২২ ফেব্রুয়ারি— মঞ্চে আসীন প্রধানমন্ত্রীকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্র। সেই মঞ্চেই নরেন্দ্র মোদীর পাশে তখন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে। প্রায় বিরল এই ঘটনাক্রমে প্রশ্নের মুখে শীর্ষ আদালতের স্বকীয়তা।

শনিবার এক অনুষ্ঠানে বিচারপতি মিশ্র মোদীর প্রশংসায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশ্বস্তরের দ্রষ্টা। ‘ভার্সেটাইল জিনিয়াস’। যিনি বিশ্ববাস্তবতা বিবেচনায় রেখে স্থানীয় স্তরে করণীয় স্থির করেন। প্রায় ১৫০০ অচল আইন বাতিল করার জন্য বিচারপতি মিশ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের প্রশংসায় মুখর হন। মিশ্রের মন্তব্য, মোদীর দৃঢ় নেতৃত্বে ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে সবচেয়ে দায়িত্ববান এবং বন্ধুবৎসল সদস্যের ভূমিকা পালন করছে।

সরকারের ভূমিকা বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় বেড়েছে এমন বিরলপ্রায় ঘটনায়। আইনজ্ঞদের অনেকেই সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, সরকারের সাংবিধানিক বা প্রশাসনিক বিভিন্ন ভূমিকার বিচার করতে হয় আদালতকে। সেই কারণে সরকারের প্রধানকে এভাবে প্রশংসায় ভরিয়ে দেওয়া কোনও কর্মরত বিচারপতির পক্ষে বেমানান। অতীতে ইন্দিরা গান্ধীর প্রশংসা করায় সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতিকে আইনজ্ঞ মহলের সমালোচনা শুনতে হয়েছিল।

সরকারের ভূমিকা বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় বেড়েছে এমন বিরলপ্রায় ঘটনায়। আইনজ্ঞদের অনেকেই সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, সরকারের সাংবিধানিক বা প্রশাসনিক বিভিন্ন ভূমিকার বিচার করতে হয় আদালতকে। সেই কারণে সরকারের প্রধানকে এভাবে প্রশংসায় ভরিয়ে দেওয়া কোনও কর্মরত বিচারপতির পক্ষে বেমানান। অতীতে ইন্দিরা গান্ধীর প্রশংসা করায় সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতিকে আইনজ্ঞ মহলের সমালোচনা শুনতে হয়েছিল।

শনিবার সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার বিষয়ক সম্মেলন। অংশ নিচ্ছেন ২০টি দেশের বিচারপতিরা। ‘বিচারব্যবস্থা এবং পরিবর্তনশীল বিশ্ব’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ভাষণ দেন। ধন্যবাদসূচক বক্তৃতা দেন বিচারপতি মিশ্র। অনুষ্ঠানে মোদীর ভাষণের প্রশংসায় মিশ্র আরও বলেন, সম্মেলন আলোচ্য স্থির করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুঘটকের কাজ করবে।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের একাধিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে দায়ের হয়েছে আবেদন। বিচারপ্রক্রিয়া চলছে। যদিও এর মধ্যেই একাধিক মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্রের সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগের বিচারে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারছে কিনা। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা প্রত্যাহার এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে ধর্মীয় মাপকাঠি চালু করায়। সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছে আবেদনও।

অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অযোধ্যায় ভেঙে দেওয়া বাবরি মসজিদেরই জমিতে রামমন্দির নির্মাণের রায় নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি টেলিকম সংস্থাগুলির বকেয়া সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি মিশ্রের রায়ে আলোড়ন পড়ে দেশে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে সরকারকে বকেয়া না মেটানোয় মিশ্রের মন্তব্য ছিল, ‘দেশে কি আইনকানুন কিছু আছে!’ টেলিকম দপ্তরের একটি চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টকে অবমাননা করা হয়েছে, বলে আদালতই। ঘটনা হলো, মিশ্রের ভাষণের সময় মঞ্চে আসীন ছিলেন সেই টেলিকম মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। যিনি ভাষণে সওয়াল করেছেন ‘সন্ত্রাসবাদী’ এবং ‘দুর্নীতিগ্রস্তদের’ ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকারের বিপক্ষে। ২০১৬-তে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মিশ্র এবং ভি গোপাল গৌড়ার বেঞ্চ সিঙ্গুর মামলায় রায় দিয়েছিল। গাড়ি কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিল বেঞ্চ।

এদিন সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণে নরেন্দ্র মোদী বিচারব্যবস্থার ওপর জনতার আস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, অনেক শঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত করে বিচারব্যবস্থার রায়েই আস্থা রেখেছেন দেশের ১কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ। উল্লেখ না করলেও আলোচনায় এসেছে রামমন্দির রায়ের প্রসঙ্গই। মোদী বলেছেন, বিচারবিভাগীয় কয়েকটি জটিল রায় ঘিরে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনা হয়েছে। রায় ঘোষণা আগে অনেকে ফলাফল ঘিরে সংশয়ও জানিয়েছিলেন। মোদীর দাবি, দেশবাসী সাদরে রায় গ্রহণ করেছেন।

এদিন বিচারপতি মিশ্রের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন আইনজ্ঞদের অনেকেই। ক্ষুব্ধ হয়েছেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এবং আইন কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এপি শাহও। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, একজন কর্মরত বিচারপতির এমন ভূমিকা অবাঞ্ছিত। সরকারের প্রধানের এমন প্রশংসা করা কর্মরত বিচারপতিকে মানায় না। এমন মন্তব্য অপ্রয়োজনীয়। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করছে বিচারব্যবস্থা তা নিয়ে সংশয় তৈরি করে। অবসরপ্রাপ্ত আরেক বিচারপতি আরএস সোধি বলেছেন, এমন মন্তব্যে বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে ভ্রান্ত বার্তা দিতে পারে। কারণ আদালতে এমন বহু মামলা দায়ের হয় যেখানে সরকার একটি পক্ষ। আইনের শাসন অনুযায়ী অন্য যে কোনও নাগরিকের মতো আদালতে সরকারও সমান। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীর পিঠ চাপড়ানোর মতো ভূমিকা নেওয়া কোনও কর্মরত বিচারপতিকে সাজে না। কারও মনে হতে পারে সংশ্লিষ্ট বিচারক নিরপেক্ষ বিচার করতে পারবেন না।

এই প্রসঙ্গে পুরানো একটি ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সোধি। ১৯৮০-তে ইন্দিরা গান্ধী সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হলে সুপ্রিম কোর্টের অন্যতম বিচারপতি পিএন ভগবতী তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি লেখেন। সেই সময়েও ভগবতীকে আইনজ্ঞদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। আইনজ্ঞদের মত ছিল, বিচারব্যবস্থা নিজেকে সরকারের সঙ্গী হিসাবে দেখাতে পারে না।

বিচারপতি মিশ্রের বক্তব্যে তীব্র শ্লেষ জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পিবি সাওয়ান্ত। প্রধানমন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত দ্রষ্টা বলায় তাঁর মন্তব্য, বছরের সেরা রসিকতা!

আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের মন্তব্য, কেন সুপ্রিম কোর্ট আপনার অধিকার রক্ষা করছে না, এ নিয়ে কি আর কোনও বিস্ময়ের অবকাশ আছে?

Spread the word