Site icon CPI(M)

Snippets of November Revolution -4

ওয়েবডেস্ক

যেকোনো গণআন্দোলন তখনি সফল হয় যখন সেটা নতুন কোনো রাজনৈতিক চিন্তার সৃষ্টি করে, আগামীর পথ প্রস্তুত করে। নভেম্বর বিপ্লব তখনকার রাশিয়ার শোষণকাঠামোকে সরিয়ে ফেলে শ্রমিক-কৃষকের সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়েও হয়তো বেশি গুরুত্বপূর্ণ মার্ক্সবাদী ও বামপন্থী রাজনীতিতে নতুন চেতনার ধারা তৈরিতে। আর তার পুরোধা ছিলেন লেনিন, তার একের পর এক লিখে চলা পত্র-পত্রিকা ও পুস্তিকার মধ্য দিয়ে. এসব লেখার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও বৈপ্লবিক লেখা ছিল নভেম্বর বিপ্লবের আগে দিয়ে ১৯১৭এর অগাস্ট ও সেপ্টেম্বরে লেখা ‘রাষ্ট্র ও বিপ্লব’, যা মার্ক্সবাদী চর্চার ক্ষেত্রে এক মৌলিক উপাদান হিসেবে হাজির হয়; খুলে দেয় নতুন চিন্তার দিগন্ত যা আজ ১০৩ বছর পর বর্তমান পৃথিবীতে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রকে কি ভাবে মার্ক্সবাদী বিপ্লবীরা দেখবে, কি ভাবে তার পরিবর্তন ঘটাবে- এই নিয়ে রাশিয়ায় হয়ে চলা রাজনৈতিক বির্তক লেনিনের মনে প্রশ্নের ঝড় তুলেছিল। আর সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তিনি চেষ্টা করেন মার্কস-এঙ্গেলস এর দিয়ে যাওয়া শিক্ষা থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজতে- মূলত তাদের বিভিন্ন উদ্ধৃতিকে তখনকার রাশিয়ার প্রেক্ষাপটের সাথে সাজিয়ে লিখছিলেন তিনি নিজের একটা নীল মলাটের নোটবইয়ে ছোট ছোট হরফে যার নাম ছিল রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্ক্সীয় দৃষ্টিভঙ্গি। যখন লেনিন সুইজারল্যান্ড-এর নির্বাসন থেকে পালিয়ে রাশিয়াতে ঢুকবেন বলে মনস্থ করলেন, তিনি খুব বেশি চিন্তিত ছিলেন এই নীল মলাটের নোটবইটা নিয়ে, কারণ তিনি জানতেন যে তিনি সাময়িক সরকারের হাতে গ্রেপ্তার বা খুন হলে এই নোটবইটি নষ্ট করে দেওয়া হবে-তিনি ১৯১৭ এর জুলাই মাসে আত্মগোপন থাকার সময় একটা নোট লেখেন : “যদি আমি খুন হই, আমি অনুরোধ করছি যে আমার নোটবই “রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্ক্সিয় দৃষ্টিভঙ্গি” যেন প্রকাশিত হয়। ওটা স্টকহোমে রেখে এসেছি, নীল মলাটে ঢাকা ওটা।” লেনিন এই “রাষ্ট্র ও বিপ্লব” বইতে প্রবল সমালোচনা করেন সেসব সুবিধেবাদী প্রবৃত্তির যা সেসময়ের অনেক তথাকথিত বিপ্লবী দলের মধ্যেই ছিল আর এই প্রবৃত্তিকে শোষকশ্রেণী ব্যবহার করছিলো। লেনিন “রাষ্ট্র ও বিপ্লব”-এ বলেন যে এই প্রবৃত্তি বিপ্লবী চিন্তাবিদদের শুধুমাত্র প্রতীকে পরিণত করে বা মহাপুরুষ হিসেবে দেখিয়ে শোষিতশ্রেণীকে এক রকম স্বান্তনা দিয়ে সেই চিন্তাবিদদের বিপ্লবী তত্বের মর্মবস্তুকেই ভুলিয়ে দিতে চায় অথবা যেটুক শাসকশ্রেণীর কাছে গ্রহণযোগ্য শুধু সেটুকুকেই সামনে নিয়ে আসে। লেনিন লিখলেন যে – রাষ্ট্র কোনোদিন শ্রেণীর ভেতরের দ্বন্দ্বের মীমাংসা করতে পারেনা কারণ রাষ্ট্র শক্তির এক বিশেষ সংগঠন যেখানে পুঁজিপতিদের স্বার্থে শোষিতশ্রেণীকে দাবিয়ে রাখার জন্য বলপ্রয়োগ করা হয়; ফলে ‘গণতন্ত্রের শান্তিপূর্ণ বিকাশ’ বা ‘গণতান্ত্রিক মুক্ত-জনরাষ্ট্র’ এসব সবই মধ্যবিত্ত সুবিধেবাদী নেতাদের বড়ো বড়ো কথা যার কোনো রাজনৈতিক সারবত্তা নেই। এই ধরণের বক্তব্য ও স্লোগান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার শোষণকে শোষিতের কাছে ‘গণতান্ত্রিক’ মোড়ক দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে হাজির করার মতো। এর সাথে সাথে লেনিন এটাও মনে করিয়ে দেন যে এই ধরণের ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রে সবার জন্য ভোটাধিকার আদতে পুঁজিবাদী শাসনকে বজায় রাখবার আরেকটা হাতিয়ার; এর থেকে বেশি কিছু আশা করার নেই। কারণ সার্বজনীন ভোটাধিকার আজকের দিনের রাষ্ট্রে খেটে খাওয়া জনগণের আশা-আকাঙ্খা প্রকাশ ও পূরণের সত্যি সত্যি নিশ্চয়তা দিতে পারবে- এটা একেবারেই ভুল ধারণা যা বিপ্লবীদের নিজেদের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রকৃত রূপ নিয়ে বোঝাপড়ার ভুলের ফলে তৈরী হয়। এবং পরে জনগণের মধ্যেও সঞ্চারিত হয় আর সেটাই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে আরো টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। “রাষ্ট্র ও বিপ্লবের” এই দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা যে: সর্বহারার প্রয়োজন রাষ্ট্রক্ষমতা কারণ শোষকশ্রেণীর প্রতিরোধ চূর্ণ করতে শ্রমিক-কৃষকের প্রয়োজন একটি কেন্দ্রীভূত সংগঠন যা এবং সেটাই শ্রমিকশ্রেণীর সংগঠনের প্রাথমিক লক্ষ্য হতে হবে-এটাই মার্ক্সবাদী শিক্ষাকে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রয়োগের প্রক্রিয়াকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিখিয়ে দিয়েছিলো, বলতে গেলে ইতিহাসে সেই প্রথমবার।

Spread the word