ওয়েবডেস্ক
সাতই নভেম্বর, ১৯১৭। ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। নেভা নদীর মুখে অরোরা জাহাজ নোঙ্গর ফেলেছে। কিন্তু তার আগেই নাবিক, সৈনিক আর রেড গার্ডরা দখল নিয়েছে পোস্ট-অফিস, নিকোলায়েভস্কি আর বাল্টিস্কি রেলস্টেশন। আলো পুরোপুরি ফুটতে না ফুটতে গোটা সেন্ট পিটসবার্গ চলে গেলো বিদ্রোহী বিপ্লবীদের দখলে। সকাল ১০টা; লেনিন সামরিক-বিপ্লবী কমিটির পক্ষ থেকে জানালেন: “অস্থায়ী সরকারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে; শ্রমিক, সৈনিক ও কৃষকদের বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক”। জারের শীতপ্রসাদেই ১৯১৭ এর ফেব্রূয়ারি মাস থেকে ছিল অস্থায়ী সরকারের সদর দপ্তর। সন্ধ্যে হতে হতে বিপ্লবীরা ঘিরে ফেললো সেই প্রাসাদ; বিপ্লবীরা অস্থায়ী সরকারকে প্রস্তাব দিলো আত্মসমর্পনের কিন্তু সাড়া মিললনা। সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হতেই অরোরা জাহাজ থেকে কামানের গলা উড়ে গেলো শীতপ্রসাদের দিকে-একটু রাত গড়াতেই অস্থায়ী সরকারের প্রতিনিধিরা বিপ্লবীদের হাতে বন্দি। শেষ রাতে দ্বিতীয় সারা-রুশ সোভিয়েত কংগ্রেস থেকে গৃহীত হয়ে সবার কাছে পৌঁছে গেলো লেনিনের আবেদন: ‘শ্রমিক, সৈনিক ও কৃষকদের প্রতি’। সবাই পড়লো আবেদনপত্রে লেখা: ” শ্রমিক, সৈনিক ও কৃষকদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছেয় এই কংগ্রেস নিজের হাতে ক্ষমতা তুলে নিচ্ছে। কংগ্রেস এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে সব অঞ্চলের ক্ষমতা অর্পিত হবে সেখানকার শ্রমিক, সৈনিক ও কৃষক সোভিয়েতের হাতে, তারা কায়েম করবে বিপ্লবী শৃঙ্খলা।শ্রমিক, সৈনিক আর কর্মীরা, বিপ্লব আর গণতান্ত্রিক শক্তির ভবিষ্যৎ তোমাদের হাতে…এবার জয় করতে হবে মহা রাশিয়ার গোটাটা, তারপর দুনিয়াটাকে।” এটা নভেম্বর বিপ্লবের শেষ নয়, ক্ষমতা দখল ছিল সূত্রপাত মাত্র। বিপ্লব একদিনের নয়, বিপ্লব নিরন্তর একটা প্রক্রিয়া যার শুরু সেন্ট পিটার্সবার্গের সেই শহরে- যাতে সাড়া দেবে গোটা রাশিয়া। তারপর ছড়িয়ে পড়বে ইউক্রেনে, বেলারুশে, উজবেক, কাজাখে, জর্জিয়ায়- দেশের প্রতিটা প্রদেশে মেহনতি মানুষ উঠে দাঁড়াবে- উথলে উঠবে এক নতুন দুনিয়া কাঁপানো জোয়ারে।