Site icon CPI(M)

Ernesto Cardenal, Nicaraguan Priest, Poet and Revolutionary, Dies at 95

“যীশুই আমাকে নিয়ে গেছেন মার্কসের কাছে। ” এহেন কথা যিনি অকপটে বলতে পারেন , লাতিন আমেরিকার ‘মুক্তিকামী ধর্মতত্ত্বের’ (liberation theology) অন্যতম প্রবক্তা সেই আর্নেস্তো কার্দেনাল আর নেই। ‘দ্রোহে আর প্রেমে’ ফাদার কার্দেনাল ছিলেন এই মহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, সাহিত্যে নোবেলের জন্য তিন-তিনবার মনোনীত হয়েছিল তাঁর নাম । তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন নিকারাগুয়ার মার্কসবাদী সান্দিনিস্তা আন্দোলনে। ১৯৭৯ সালে স্বৈরাচারী সোমোজাকে হঠিয়ে সান্দিনিস্তা সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ছিলেন সেই সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রী।

রবিবার বিকেলে প্রয়াত হয়েছেন কার্দেনাল। অসুস্থতার জন্য কয়েকদিন ধরেই নিকারাগুয়ার রাজধানী মানাগুয়ায় একটি হাসপাতালে তিনি ভর্তি ছিলেন । রবিবার সেখানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫। তাঁর জীবনাবসানে তিনদিন রাষ্ট্রীয় শোকের কথা ঘোষণা করেছে সান্দিনিস্তা সরকার। শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দানিয়েল ওর্তেগা এবং উপরাষ্ট্রপতি রোসারিও মুরিলো।

মাথায় হাল্কা সাদা চুলে কালো বেরেই টুপি, কলার ছাড়া সাদা শার্ট ছিল কার্দেনালের ট্রেডমার্ক। এই শান্ত, স্নিগ্ধ রূপটির আড়ালেই লুকিয়ে ছিল এক বিপ্লবী মনোভাব যা নিকারাগুয়ার সংগ্রামী মানুষের মনে যুগিয়েছিল ভরসা। একাধারে তিনি কবি ও বিপ্লবী। ২০ জানুয়ারি ১৯২৫-এ ঔপনিবেশিক শহর গ্রানাদার এক অভিজাত পরিবারে তাঁর জন্ম। সাহিত্য নিয়ে মানাগুয়াতে পড়াশোনা , পরে নিউ ইয়র্ক শহরের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা। সেই সময়েই পরিচয় ওয়াল্ট হুউটম্যান, এমিলি ডিকিনসন, এজরা পাউন্ডের সঙ্গে। পাঁচের দশকে ফিরে আসেন নিকারাগুয়াতে। ১৯৫৪ তে কার্দেনাল যোগ দেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর পপুলার এ্যাকশান নামে একটি নিষিদ্ধ বামপন্থী সংগঠনে। সেবছরের এপ্রিলে সোমাজার প্রাসাদে ব্যর্থ অভ্যুত্থানে যোগ দেন তিনি ,এপ্রিল বিপ্লব নামে খ্যাত সেই অভ্যুত্থানে নিহত হন ওনার অনকে সহযোদ্ধা। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন তিনি। সেই আত্মগোপন পর্বেই তাঁর মহত্তম কবিতা ‘জিরো আওয়ার’ রচনা। পরে একজন ধর্মযাজক হয়ে দেশে ফেরেন। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন সান্দিনিস্তা জাতীয় মুক্তি ফ্রন্টের সোচ্চার সমর্থক। এই সব কিছুর মধ্যে থেকেই উঠে এসেছে তাঁর  কবিতা। যে কবিতা বলত জীবনের কথা , প্রেমের কথা। কখনো সেটাই হয়ে উঠত লড়াইয়ের হাতিয়ার।

কার্দেনালের কাজকর্ম যথারীতি সুনজরে দেখেনি ভ্যাটিকান সিটি। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন পোপ জন পল দ্বিতীয় তাঁকে রীতিমত ভর্ৎসনা করেন। সে বছরই পোপের নিকারাগুয়াতে যাওয়ার কথা ছিল। কার্দেনাল সহ চারজন ধর্মযাজক, যাঁরা সক্রিয়ভাবে বিপ্লবকে সমর্থন করেছেন, তাঁদেরকে সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলেন পোপ। সান্দিনিস্তা সরকার সেই দাবি খারিজ করে দেয়, যদিও জানিয়ে দেয় যে পোপকে আমন্ত্রণ জানাতে সরকারের কোন সমস্যা নেই। সে বছরই তাঁকে ও তাঁর ভাই ফার্নান্দোকে ধর্মযাজকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। দীর্ঘ তিনদশক পর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পোপ ফ্রান্সিস তাঁদের ওপরে জারি থাকা নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেন।

মাঝে ১৯৮৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে কার্দেনাল অকপটে জানান, ‘যীশুই আমাকে নিয়ে গিয়েছেন মার্কসের কাছে। আমি জানি না মার্কসবাদ সম্পর্কে পোপের বোঝাপড়া কী । তবে আমার কাছে, যীশুর নীতিমালা চার গস্পেল একইভাবে কমিউনিস্ট ভাবধারার। আমি একজন মার্কসবাদী, যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, অনুসরণ করে যীশুকে , এবং তাঁর রাজত্বের জন্য আমি একজন বিপ্লবী’।

Spread the word