২০১৫ সালে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং দেশে দারিদ্র দূরীকরণে সরকারী লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন। ২০২০ সালের মধ্যে চীনে ১ কোটিরও বেশি মানুষকে দারিদ্রসীমার উপরে তুলে আনা হবে।
এই লক্ষ্যে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ৭৭৫,০০০ পার্টিকর্মী সক্রিয় হয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী ১৯৯০’তে চীনে মোট জনসংখ্যার ৬০%, প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্রের সীমানার আওতায় বাস করতেন, ৩০ বছর পরে ২০১৯ সালে দেখা যাচ্ছে ১৬.৬ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্রের কবলে রয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বলেছেন, তাদের লক্ষ্য হল এক “পরিমিত সমৃদ্ধশালী সমাজ” (Moderately Prosperous Society) গঠন।
দারিদ্র দূরিকরণে নিজেদের অবস্থানকে সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লড়াইতে এই যুগে গরীবির এক রুপান্তরিত এবং তুলনামূলক নতুন চেহারার (A new stage characterized by Transformational Secondary and Relative Poverty) সাথে সংগ্রাম হিসাবে ব্যাখ্যা করছে।
নিজেদের দেশে গরীবি নির্মূল করতে চীন আন্তর্জাতিকভাবে দারিদ্র চিহ্নিতকরণের কাজে ব্যাবহৃত বিশ্বব্যাংকের স্থির করা সূচকের চেয়েও উচ্চমাত্রার মাপকাঠি ব্যাবহার করেছে।
চীনে গ্রামীন ক্ষেত্রে দারিদ্রসীমার সরকারী সূচক হল বছরে ২৩০০ ইউয়ান বা দিন প্রতি ৬.৩ ইউয়ান মুল্যের চেয়ে কম ব্যায় করার ক্ষমতা (২০১০ সালের হিসাব)। ২০১১ নাগাদ আন্তর্জাতিকভাবে ১.২৫ ইউ এস ডলার ব্যায়ের ক্ষমতা না থাকলে দরিদ্র বলা হত, পরে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক তাদের এই সূচককে ১.৯০ ডলারে উন্নিত করে।
চীনের গুইঝোউ প্রদেশে দারিদ্র দূরীকরণের কাজে ব্যাস্ত এক কর্মীর বয়ানে “এই কাজে কোনো সমস্যাই হবে না যদি গোটা চীনের সমাজ প্রচেস্টায় নামে”।
২০১২ সাল থেকে দূনিয়াজূড়ে চলা অর্থনৈতিক সংকট বা মন্দার মোকাবিলায় চীন পুঁজিবাদী ব্যাবস্থার বেইল আউট বা বেইল ইন পন্থার উল্টোপথে হেঁটে গরীব মানুষদের হাতে গড় রোজগার এবং সঞ্চয় বাড়ানোর কাজে নামে, দেশজূড়ে গরীব এলাকা চিহ্নিত করে এই কাজে ব্যাপকভাবে এগোয়। এরই ফলাফলে চীন নিজেদের অনেকটাই আর্থিক মন্দার প্রকোপ থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়।
গ্রামীন চীনের দারিদ্র আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দাদের গড় রোজগার ১০,৩৭১ ইউয়ান (১৫৩০ ইউ এস ডলার) বজায় রাখা হয়েছিল যা ২০১৮ সালের ৮% মুদ্রাস্ফিতির হারকে মাথায় রেখে বিন্যস্ত করা হয়েছিল।
শেষ চল্লিশ বছরের হিসাবে স্পস্ট, চীন নিজেদের দেশে ৭৫৪ মিলিয়ন মানুষকে দ্রারিদ্রের প্রকোপ থেকে মুক্তি দিয়ে এক সম্মানজনক, মানবিক জীবনযাত্রার স্তরে উন্নিত করেছে যা ২০১৬ সালে ইউরোপের জনসংখ্যার (৭৪১ মিলিয়ন) চেয়েও বেশি।
গোটা পৃথিবীতে আর্থিক মন্দার মোকাবিলায় পুঁজিবাদ দিশেহারা, একের পর এক দেশে ফ্যাসিবাদ অথবা ফ্যাসিবাদী প্রবণতার তৎপরতা বাড়ছে – উত্থান হচ্ছে আরও বেশি অমানবিক, নিষ্ঠুর রাজনৈতিক শক্তির, যা সমস্যাকে সমাধান করতে পারছে না, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ক্রমাগত এক যুদ্ধবাজ, আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়ে চলেছে।
এই পরিস্থিতিতে চীন পুঁজিবাদী ব্যাবস্থার বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে ১ কোটিরও বেশি মানুষকে গরীবি থেকে মুক্তি দিচ্ছে – এই বার্তা স্ফুলিঙ্গের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ুক। পুঁজিবাদের বাস্তব বিকল্প আছেই, এই আশায় বুক বাঁধছে মানুষ, দুনিয়া জূড়ে।