পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী, আশু লক্ষ্য জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন…
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা ১৯২০ সালে। তাসখন্দে। নভেম্বর বিপ্লবের আকর্ষণ এবং স্বপ্ন তখন ধীরে ধীরে বাড়ছে। ভারতেও তার প্রভাব পড়েছে। কিছুদিন আগেই ঘটে গেছে জালিয়ানওয়ালা বাগের নৃশংস হত্যাকান্ড। মানুষ তখন ফুঁসছে। সংগ্রামী চেতনা বাড়ছে। কিন্তু নেতৃত্বের অভাব বোধ করছে মানুষ। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। রবীন্দ্রনাথের লেখনীতে তা স্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথ নাইট উপাধি ত্যাগ করলেন। বস্তুত, দেখা যাবে বিশের দশক থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির এই গোটা সময়কালের অজস্র, অসংখ্য ছোট-বড় লড়াই সংগ্রামের বহুক্ষেত্রেই জালিয়ানওয়ালা বাগের ঘটনার একটা প্রভাব কাজ করছে দারুনভাবে।
জন্মলগ্নেই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সামনে কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী তুলে ধরে। স্বাধীনতার লড়াইয়ের সংগ্রামী চেতনার ক্ষেত্রে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পার্টিই প্রথম ও সর্বাগ্রে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী উত্থাপন করে। বিদেশী আধিপত্য থেকে মুক্তি এবং স্বাধীন, সার্বভৌম, প্রজাতন্ত্র গঠনের সংকল্প করে। জাতীয় কংগ্রেসের মঞ্চে, ১৯২১ সালে আমেদাবাদ অধিবেশনে প্রথম পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী উত্থাপন করে কমিউনিস্টরা। পূর্ণ স্বাধীনতার দাবীতে প্রস্তাব পেশ করেন মৌলানা হজরত মোহানী এবং স্বামী কুমারানন্দ। প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। এর পর থেকে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিটি অধিবেশনে কমিউনিস্টদের পক্ষ থেকে এই দাবী উত্থাপিত হয়েছে। তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতা এম এন রায়, অবনী মুখার্জীদের স্বাক্ষরিত ইস্তাহারে পূর্ণ স্বাধীনতা এবং শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে প্রস্তাব গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় অধিবেশনে। অবশেষে ১৯২৮ সালের পার্ক সার্কাসে অনুষ্ঠিত কলকাতা অধিবেশনের ভিতরে কমিউনিস্টদের সহযোগিতায় পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব উত্থাপন করেন সুভাষ চন্দ্র বসু। অধিবেশন তা গ্রহন করল না,বাহিরে প্রায় পঞ্চাশ হাজার শ্রমিক-কৃষকের সমাবেশ। নাছোড়বান্দা। পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গ্রহণ করতেই হবে। অবশেষে কংগ্রেস নেতারা সময় চাইলেন এবং ১৯২৯ সালে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গ্রহণ করল কংগ্রেস। টানা দশ বছর লড়াইয়ের পর, অবশেষে কমিউনিস্টদের উত্থাপিত পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব গৃহীত হল কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে।
এই সময়কালে কমিউনিস্ট পার্টি ভারতে বিপ্লবের উদ্দেশ্য ঘোষণা সহ ‘ড্রাফট প্ল্যাটফর্ম অফ অ্যাকশন’ গ্রহণ করে ১৯৩০ সালে। পার্টির লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়। বৃটিশ সরকারকে উৎখাত এবং পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন সহ ঋণ মুকুব, ব্যাংক-রেল-বন্দর-বৃটিশের মালিকানাধীন কারখানা জাতীয়করণ, ৮ঘন্টা কাজের অধিকার, মজুরি বৃদ্ধি, বেকারীর অবসান, প্রতিটি মানুষের সমানাধিকার সহ এই ধরণের জনস্বার্থের দাবীগুলি ঘোষিত হয়। সারা দুনিয়ার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের সাথে যে ভারতের মুক্তি আন্দোলন একই সূত্রে গাঁথা তাও ঘোষণা করা হয়। জাতীয় আন্দোলনের সামনে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আদর্শ তুলে ধরে কমিউনিস্টরা। বলা হয় – পার্টির আশু লক্ষ্য জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন এবং চরম লক্ষ্য মানবমুক্তি। লক্ষ্য সমাজতন্ত্র।
বস্তুতপক্ষে বিশের দশক থেকেই দেশের নানা প্রান্তে কৃষক, শ্রমিকদের সংগ্রাম ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পেশোয়ারের শ্রমিক বিক্ষোভ, বম্বের সূতাকলের ধর্মঘট, বাংলায় চটকলের ধর্মঘট, খড়গপুরের রেল শ্রমিক ধর্মঘট, কলকাতায় গাড়োয়ান
ধর্মঘট সহ নানা ধরণের সংগ্রাম এই সময়ে বিকশিত হচ্ছে। এই সময়েই রিয়াং বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহ সহ বহু কৃষক সংগ্রাম। শ্রমিক-কৃষক সহ সংগঠিত আন্দোলনের এই বৃদ্ধি তৎকালীন সময়ে সবারই নজর কেরেছে।
তিরিশের দশকে সংগঠিত আন্দোলনের পাশাপাশি, দেশের নানা প্রান্তে বিপ্লববাদী আন্দোলনের বিকাশও স্পষ্ট। স্পষ্ট বিকশিত হয়েছে। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ এই সময়ের একটি সাড়া জাগানো ঘটনা। এই আন্দোলনের নায়কদের একটি বড় অংশ পরবর্ত্তী সময়ে কমিউনিস্ট আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বকারী ভুমিকা পালন করেছেন। কোন কিছুই নজর এড়াইনি বৃটিশ বাহিনীর। ১৯২৯ সালে ভাইসরয় লর্ড আরউইন ভাষণ দিতে গিয়ে বলছেন – ‘The disquieting spread of communist doctrines has been causing
লেখাটি সম্পূর্ণ ৬টি পর্বে প্রকাশিত হবে…
ক্রমশ…