২১ জানুয়ারি, ২০২০
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরি ছিল রাজ্যের পালা বদলের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু, সেই খেজুরিতেই সি পি আই (এম)-এর সমাবেশয় ভাসল মানুষের স্রোতে। খেজুরির উপচে পড়া সমাবেশয় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, NRC-NPR নিয়ে বিজেপি আর তৃণমূল এলাকায় গিয়ে উল্টো বোঝাচ্ছে মানুষ কে। দুই চরম দক্ষিণপন্থী দল হাতে হাত মিলিয়ে এই কাজ করছে। মানুষকে সঠিক পথ দেখতে, সঠিক বোঝাতে বাড়ি বাড়ি যেতে হবে সি পি আই (এম) কর্মী সমর্থক, পার্টি দরদীদের। কোনো কাগজ পত্র দেখতে আপনারা বাধ্য নন। দরকারে আন্দোলন আরো তীব্র আকার নেবে। আরো এক জোট হয়ে লাগাতার ভাবে রাস্তায় নেমে তৃণমূল – বিজেপির বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন।
সন্ত্রাস কে উপেক্ষা করে আগেই পথে নেমেছিলেন মানুষ। এদিন চারটি মহামিছিল করে এসে ভরিয়ে দিয়েছিলেন সমাবেশের মাঠ। বিমান বসু ছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি, পার্টি নেতা তথা বিধায়ক শেখ ইব্রাহিম, পরিতোষ পট্টনায়ক। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিমাংশু দাস।
এদিন সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী ৯৬ বছরের অরুণ দাস। স্বাধীনতা সংগ্রামী অরুণ দাসের বাড়ির অবস্থা খুবই ভগ্ন। সেই জন্য অসহায় বৃদ্ধের জন্য একটি ঘর করে দেয়ার উদ্দেশ্যে বহু মানুষ অর্থ প্রদান করেন। তাকে সম্মাননা জানাতে তার বাড়িতে গিয়ে একটি সংবর্ধনা সভা করে সংগৃহিত অর্থ তুলে দেয়ার কথা ছিল তার হাতে। কিন্তু তৃণমূলের বাঁধায় তা হয়ে ওঠেনি। খেজুরির সমাবেশের মঞ্চে প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী অরুণ দাসের হাতে আর্থিক সাহায্য হিসাবে ২ লক্ষ টাকা চেক তুলে দেন বিমান বসু।
বিমান বসু বলেন তৃণমূল আর বিজেপি দুটি ভিন্ন মতের দল নয়, তিনি বলেন তৃণমূল নাটক করে বলেছিল তারা বামপন্থী। কিন্তু এই দলটি চরম দক্ষিণপন্থী দল। তারা হাত মিলিয়েছে আর এক চরম দক্ষিণপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে। তৃণমূলকে ঠেকাতে বিজেপির দিকে যারা ঝুঁকেছিলেন , তারা এখন সরে আসছেন ওদিক থেকে। ওদের এই মুখোশ খুলে দিতে হবে। সেন্সস বা জনগননা তে আমরা রাজি। সেটা চলে আসছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু NRC বা NPR অন্য বিষয়। সমস্ত তথ্যই শুধু নয়, জন্মস্থান নিয়েও নানা তথ্যের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করতে চাইছে বিজেপি- আর এস এস। তৃণমূল ও কিন্তু একই প্রচার করছে। মোদী সরকারের নির্দেশে তৃণমূল সরকার তার প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করছে। ডিটেনশন ক্যাম্পের জায়গা নির্বাচন করার চেষ্টা করছে। আবার ধরা পড়ে গেলে অস্বীকার করছে। বিমান বসু প্রশ্ন তুলে বলেন, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে এখানকার মুখ্যমন্ত্রীর কিসের বৈঠক জানতে পারি কি? সেখানে অন্য কিছু রফা হয়েছে। তার জেরেই সিবিআই আধিকারিকরা বদলি হয়ে গেলেন। দেশে কাজ নেই NPR – NRC নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে সরকার। এর বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই লড়তে হবে। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ছাত্র-ছাত্রীরা দেশ জুড়ে গর্জে উঠেছে। সবাইকেই এখন লাগাতার ভাবে পথে নামতে হবে।
সন্ত্রাস চালিয়ে লাল ঝান্ডাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা তৃণমূল এখনো করে চলেছে বলে মন্তব্য করে নিরঞ্জন সিহি বলেন, এভাবে থামিয়ে রাখা যায় না লাল ঝান্ডা কে। এই সমাবেশ ও বানচাল করার চেষ্টা করেছিল তৃণমূল কিন্তু সাধারণ মানুষ পথে বেড়িয়ে সমাবেশ কে ভরিয়ে তুলেছেন।ভয় ভেঙে যাচ্ছে মানুষের। জেলার প্রতিটি এরিয়া কমিটির অফিস খুলে গিয়েছে। এভাবেই সর্বশক্তি দিয়ে তৃণমূল বিজেপিকে রুখতে হবে। লাল ঝান্ডার উপর আক্রমণ মানুষ ছেড়ে দেবে না। ইব্রাহিম আলি বলেন, এই জেলায় প্রায় ৭০জন মানুষ শহীদ হয়েছে। তৃণমূল যদি ভেবে থাকে ,যা খুশি তাই করা যাবে,তারা যদি ভাবে সি পি আই(এম) এর পার্টি অফিস গুলো আবার দখল করবে, তাহলে তারা ভুল ভাবছে। মানুষই আমাদের শক্তি। এই শক্তিই রুখবে NRC-NPR।
প্রতিটি মানুষের জন্য কাজের দাবি তোলেন পরিতোষ পট্টনায়ক ।প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী’র ভাঁওতা বুঝে ফেলেছেন মানুষ। গোটা দেশে তো বটেই, এই রাজ্যের মানুষ আরো বেশি বিপন্ন। কারণ দুটি সরকার ভিতরে ভিতরে হাত মিলিয়ে চরম বিপদ ডেকে আনছে। ডিটেনশন ক্যাম্পে তো সেই শিল্পপতিদের থাকা উচিত যারা মানুষের টাকা মেরে চম্পট দিয়েছে। প্রতিটি মানুষের সামনে আরো সঙ্কট আসছে। সুতরাং এসবের বিরুদ্ধে আরো সোচ্চার হতে হবে… বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন