ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন

রাশিয়ায় নভেম্বর বিপ্লব হয়নি।
আমরা নভেম্বর বিপ্লব বলি নতুন ক্যালেন্ডারের নিয়মে। পুরানো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সময়টা ছিল অক্টোবর মাস। ১৯১৭ সালের ২৫শে অক্টোবর।
এই তারিখেই রাশিয়ার শ্রমিক-কৃষকদের সোভিয়েতগুলি নিজেদের স্লোগানকে কাজে পরিণত করে।
এর কিছুদিন আগেই তারা স্লোগান তুলেছিল- ‘সব ক্ষমতা চাই সোভিয়েতের হাতে’।
আজকের প্রজন্মের হয়ত সবটা জানা নেই, সোভিয়েত কথার প্রকৃত অর্থ হল পঞ্চায়েত। আজকের পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল শাসনে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা যা হাল তার ধাক্কায় ‘সোভিয়েত’ শব্দের ‘পঞ্চায়েত’ অর্থটি অনুধাবন করা যদিও অসম্ভব। লেনিনের পঞ্চায়েত ছিল জনগণের রাজ। জারের শাসনে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে শোষিত, নিপীড়িত কৃষকরা- চিমনি থেকে বেরিয়ে আসা কালো ধোঁয়া ফুসফুসে ভরে নিরন্তর খেটে চলা মজুরের দল এবং দিনের পর দিন যুদ্ধরত ফৌজ শান্তি-রুটি আর জমির দাবিতে একসাথে মিলে দশদিনে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
পৃথিবীর বুকে প্রথম শ্রমিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে মেহনতি মানুষ এগিয়ে এসেছিল তিনটি বুনিয়াদি স্লোগানে ভর করে।
শান্তি। জমি। রুটি।
আজকের পৃথিবীতে প্রযুক্তির নাম করে বারে বারে নতুন দুনিয়ার প্রচার চলে, আসলে মার্কেটিং করা হয়- বাস্তবের নতুন দুনিয়া কোনও টেকনোলজি ড্রিভেন মেকানিজমে গড়ে ওঠেনি। যুগ পরিবর্তনে টেকনোলজি কোনদিনই নির্ধারক বিষয় ছিল না- টেকনোলজি কাদের হাতে রয়েছে, কোন সমস্যার সমাধানে তার গবেষণা, প্রয়োগ হচ্ছে এটাই আসল কথা।
লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা ঠিক কি করেছিলেন? তারা প্রমান করেছিলেন মার্কস সঠিক- মানুষ স্বর্গচ্যুত হয়ে পৃথিবীতে পাপের বোঝা টানে না, আসলে তার যাত্রাপথ এর ঠিক বিপরীত। শোষণ, নিপীড়ন, লালসা, ক্ষমতা, দম্ভ এসবই আসলে দুপায়ে হেঁটে চলা হোমো-স্যাপিয়েন্সকে এখনও বানরের মতো ইতর করে রাখছে। আর তাই বারে বারে এঙ্গেলসের লেখা শ্রমের ভূমিকা পড়তে হয়, যাতে বানর থেকে মানুষ হতে বাকি কাজটুকু সচেতনভাবেই শেষ করা যায়। শোষিত বলেই যেমন বেশিরভাগের জীবনবোধ অসম্পূর্ণ, তেমনি আবার শোষক বলেই বাকিদের জীবনও আদৌ মানুষোচিত নয়। আসল মানুষ দিগন্ত খুঁজে পায় যেদিন সে হয় মুক্ত, প্রকৃত অর্থে দাসত্বের শৃঙ্খল ছিঁড়ে ফেলার পরেই। মানুষের ইতিহাস প্রমান দেয় প্রথমে প্রাকৃতিক শক্তির, পরে উৎপাদিকা শক্তির এবং শেষে নিজেদেরই সমাজের শ্রেণি-বিভক্ত অবস্থার শৃঙ্খলে জড়িয়ে থাকা প্রাণীটি মুক্ত হয় সেইদিন যখন সে বোঝে ‘লিখিত ইতিহাসের সবটাই আসলে শ্রেণি-সংগ্রামের ইতিহাস’ এবং … ব্যখ্যা নয় আসল কথাটা হল যে অবস্থা চলছে তার পরিবর্তন সাধন।
এই ঐতিহাসিক ও বিজ্ঞানসম্মত জীবনদর্শনের প্রথম সুসংহত আখ্যান লিখে যান কার্ল মার্কস- ফ্রেডেরিখ এঙ্গেলস। কিছুটা সেই কাজে তারা এগিয়েও ছিলেন (প্যারি কমিউন)। মার্কস-এঙ্গেলসের সেই বিশ্ববিক্ষাই হাতে কলমে করে দেখালেন বলশেভিকরা যাদের নেতা লেনিন। নিপীড়িত, শোষিত, প্রচলিত মানদণ্ডে অশিক্ষিত-ছোটলোক মানুষ তারা দেশ চালাতে পারে না- এই অমোঘ ধারনাকেই দুরমুশ করে দিয়েছিল ‘সোভিয়েত’- জনগণের পঞ্চায়েত।
প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা, আত্মনির্ধারণের অধিকার এবং গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুযোগ পেলে মানুষ- হ্যাঁ মানুষই ইতিহাস রচনা করে। অবশ্যই সেই ইতিহাস সবটা নিজেদের ইচ্ছামত হয় না, চারপাশের বাস্তবিক অবস্থার ভিত্তিতেই তা নির্মিত হয়। কিন্তু পুঁজিবাদ ছাড়া সমাজ অচল বলে কিছু পণ্ডিতপ্রবর যে মালাটি জপেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের সংবিধানের মুখবন্ধটুকু পড়লে আজও তাদের সেই মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
আজ ৭ই নভেম্বর। এখন পৃথিবীর সময় ২০২২ সাল।
এখন পঞ্চায়েত ভোট হয়। অবশ্য গতবার তৃণমূল কংগ্রেস সেই সুযোগটুকুও রাখেনি।
সামনে সেই ভোট।
এই রাজ্যের মানুষ অনেক কিছুই দেখেছেন, সহ্য করেছেন- লড়াইও চালাচ্ছেন।
আমরা জানি, জেনে হোক- না জেনে হোক আজও জনগণের লড়াই হয় সোভিয়েত’কে দেখেই। সোভিয়েত যখন ছিল তখনও হত, আজ যখন সে নেই তখনও হয়, হচ্ছে।
উপরি যেটুকু তা শুধু এই যে এখন মাসের ক্যালেন্ডারে নভেম্বরই দেখাচ্ছে।
নভেম্বর বিপ্লব লাল সেলাম।
ওয়েবডেস্কেঃ সৌভিক ঘোষ