জীবনযাত্রার গুণগত মান পরিমাপ করে এমন বেশ কয়েকটি সূচকে কেরালা ও গুজরাটের শিশু এবং মহিলাদের মধ্যেকার তফাৎ স্পষ্ট হয়। 'গুজরাট মডেল' এবং কেরালার জনকেন্দ্রিক উন্নতির যে পার্থক্য, তার পরিষ্কার ছবি তুলে ধরে।
শিক্ষাঃ প্রাইমারিতে গুজরাটের মোট অন্তর্ভুক্তির অনুপাত ৯৬ শতাংশ। কেরালার ১০০ শতাংশ ও ভারতের ১০৩ শতাংশের চেয়ে যা সামান্যই কম। কিন্তু মধ্যশিক্ষা স্তরে (নবম-দশম শ্রেণি) গুজরাটে তা নেমে আসে ৭৭ শতাংশে আর কেরালাতে তা যথেষ্ট বেশী - ৯৭ শতাংশ। উচ্চ মধ্যশিক্ষার ক্ষেত্রে গুজরাটে মোট অন্তর্ভুক্তির অনুপাতে ধ্বস নেমে ৪৩ শতাংশ দাঁড়ায়, যা ভারতের গড় অনুপাত ৫১ শতাংশের চেয়েও কম। উচ্চ মধ্য শিক্ষাতেও কেরালা ৮৩ শতাংশ অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অনেক এগিয়ে। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী গুজরাটে উচ্চমাধ্যমিক স্তর অব্দি পৌছাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি। (২০১৯-২০’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – ইউ ডি আই এস ই)
আয়ুঃ আয়ু হল মানুষের বেঁচে থাকার গড় বয়স। গুজরাটে তা ৭০.৫ বছর যেখানে কেরালায় মানুষের গর আয়ু ৭৫ বছর। এক্ষেত্রে ভারতের গড় ৭০ বছর। (২০১৬-২০’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – এস আর এস, ও আর জি আই)
শিশু মৃত্যুর হারঃ অর্থাৎ প্রতি হাজার জন শিশুর মধ্যে ১ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগে মারা যাওয়া শিশুর সংখ্যা। যেখানে গুজরাটে শিশু মৃত্যুর হার ২৩ সেখানে কেরালাতে মাত্র ৬। অন্যদিকে ভারতে শিশু মৃত্যুর হার ২৮। (২০২০’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – এস আর এস, ও আর জি আই)
শিশু পুষ্টিঃ ৬ থেকে ২৩ মাস বয়সীদের মধ্যে গুজরাটে মাত্র ৬ শতাংশ শিশু সঠিক পুষ্টি পায় যা তুলনামুলকভাবে কেরালার ২৩.৫ শতাংশের থেকে অনেক কম। অপরদিকে ভারতে শিশু পুষ্টির গড় ১১.৩ শতাংশ। যথেষ্ট পুষ্টি বোঝাতে বলা যায় মাতৃদুগ্ধ অথবা নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্দিষ্ট পরিমানে বিভিন্ন ধরণের তরল ও কঠিন খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ করা। (২০১৯-২০’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – এন এফ এইচ এস-৫)
অপুষ্টিঃ শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে কিনা তা মূল্যায়ন করতে তিনটি মাপকাঠি ব্যবহার করা হয়। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে সেই তথ্য দেওয়া হলঃ (২০১৯-২০’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – এন এফ এইচ এস-৫)
· বয়স অনুপাতে কম উচ্চতা – গুজরাটে বয়স অনুপাতে কম উচ্চতার শিশুর হার ৩৯ শতাংশ। অপরদিকে কেরালায় এই হার মাত্র ২৩.৪ শতাংশ। সমগ্র দেশে এই হার ৩৫.৫ শতাংশ।
· উচ্চতা অনুপাতে কম ওজন – উচ্চতা অনুপাতে কম ওজনের শিশুর হার গুজরাটে যখন ২৫.১ শতাংশ তখন কেরালাতে এই হার ১৫.৮ শতাংশ। সমগ্র ভারতে এই হার ১৯.৩।
· বয়স অনুপাতে কম ওজন – যেখানে গুজরাটে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশুর ওজন কম সেখানে কেরালায় এই হার ২০ শতাংশেরও কম। আর ভারতের গড় ৩২ শতাংশ।
শিশু রক্তাল্পতাঃ গুজরাটে ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে অবিশ্বাস্যভাবে রক্তাল্পতার হার ৭৯.৭ শতাংশ যা সমগ্র ভারতের গড় ৬৭.১ শতাংশের চেয়েও অনেক বেশী। অন্যদিকে কেরালাতে রক্তাল্পতার হার ৩৯.৪ শতাংশ। (২০১৯-২০’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – এন এফ এইচ এস-৫)
নারী শিক্ষাঃ গুজরাটে যেখানে মাত্র ৭৩.৫ শতাংশ নারী শিক্ষিত সেখানে কেরালায় নারী শিক্ষার হার ৯৭.৪ শতাংশ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল গুজরাটে মাত্র ৩৪ শতাংশ মহিলা সারা জীবনে ১০ বছরের বেশী সময় স্কুলশিক্ষা পেয়েছেন। অন্যদিকে কেরালায় ৭৭% মহিলাই ১০ বছরের বেশী সময় স্কুল শিক্ষা পেয়েছেন। সারা ভারতে এই হার ৪১ শতাংশ। (২০১৯-২০’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – এন এফ এইচ এস-৫)
নারীদের বিবাহের বয়সঃ গুজরাটে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মহিলাদের প্রায় ২২ শতাংশ জানিয়েছেন যে ১৮ বছর বয়সের আগেই তাদের বিবাহ হয়েছে। যার সর্বভারতীয় গড় ২৩.৩ শতাংশ এবং তা কেরালার ৬.৩ শতাংশের প্রায় ৪ গুণ। (২০১৯-২০’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – এন এফ এইচ এস-৫)
মাতৃত্বকালীন মৃত্যুহারঃ এটি বলতে বোঝায় প্রতি এক লাখে প্রসবজনিত জতিলতার কারণে নারী মৃত্যুর সংখ্যা। গুজরাটে এই সংখ্যা যেখানে ৭০ সেখানে কেরালায় এই সংখ্যা তার অর্ধেকেরও কম – ৩০। অপরদিকে ভারতে এর গড় ১০৩। (২০১৭-১৯’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – এস আর এস, ও আর জি আই)
নারী রক্তাল্পতাঃ গুজরাটে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের (১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী) মধ্যে ৬৩ শতাংশ নারী রক্তাল্পতায় ভোগেন যা তুল্যমূল্য বিচারে কেরালার ৩১.৪ শতাংশের দ্বিগুণেরও বেশী। আর এখাত্রে ভারতের গড় ৫২ শতাংশ। (২০১৯-২০’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – এন এফ এইচ এস-৫)
গর্ভবতী সুবিধাঃ গুজরাটে ৭৭ শতাংশ গর্ভবতী নারী ৪ বার প্রসবপূর্ব স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ পান। কেরালায় সেই হার সামান্য বেশী ৭৯ শতাংশ। অপরদিকে ভারতবর্ষে এই গড় ৫৮ শতাংশ। তবে এই সেবার যে মূল বিষয় - পর্যাপ্ত আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ – সেক্ষেত্রে দুই রাজ্যের বিস্তর ফারাক। যেখানে গুজরাটে ৪৩ শতাংশ অন্তঃসত্বা নারী ১৮০ দিনের জন্য আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করতে পারেন সেখানে কেরালাতে এই হার ৬৭ শতাংশ। আর সমগ্র ভারতে এর গড় ২৬ শতাংশ। (২০১৯-২০’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – এন এফ এইচ এস-৫)
দাম্পত্য হিংসাঃ গুজরাটে কখনো বিবাহ করেছেন এমন মহিলাদের মধ্যে ১৪ শতাংশ মহিলা জানিয়েছেন কখনো না কখনো তারা নিজেদের স্বামীদের নিপীড়নের স্বীকার হয়েছেন। অপর দিকে কেরালাতে সেই হার ৯.৯ শতাংশ। সমগ্র ভারতে দাম্পত্য হিংসার গড় হার ২৯ শতাংশ। (২০১৯-২০’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – এন এফ এইচ এস-৫)
গৃহ সুবিধাঃ গুজরাটে যেখানে ৭৪ শতাংশ গৃহে উন্নত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা আছে সেখানে কেরালায় ৯৯ শতাংশ গৃহেই এই ব্যবস্থা আছে। আর সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই গড় ৫৯ শতাংশ। গুজরাটে ৬৭ শতাংশ বাড়িতে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার করা হয় অপরদিকে কেরালায় এর হার ৭২ শতাংশ। (২০১৯-২০’র তথ্য অনুযায়ী, সূত্র – এন এফ এইচ এস-৫)
ওয়েবডেস্কের পক্ষে - কৃষ্ণায়ন ঘোষ
শেয়ার করুন