The Journey Towards The 23rd Party Congress (Part III)

দ্বাদশ পার্টি কংগ্রেস (কলকাতা-১৯৮৫)

২৫ ডিসেম্বর-৩০ ডিসেম্বর, ১৯৮৫ এই পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। দেশব্যাপী বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ, সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান, নির্বাচনে ইন্দিরা হত্যাজনিত সহানুভূতি ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠিত দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে পার্টির শক্তি বৃদ্ধি করে গণতান্ত্রিক অংশের ব্যাপক ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানায় দ্বাদশ কংগ্রেস। এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল এমন এক সময়ে যখন দেশে জাতীয় সংহতি ও অখণ্ডতা গুরুতর চ্যলেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। পাঞ্জাব, আসাম সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ক্রমশ তীব্র হচ্ছিল। সাম্রাজ্যবাদী মদতপুষ্ট পাঞ্জাবের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির হাতে খুন হন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এর ফলে কংগ্রেস (আই) দল বিপুল সংখ্যা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে। কংগ্রেসের আপোসকামী ও উদাসীন মনোভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তিও মথাচাড়া দিতে থাকে। এই প্রেক্ষাপটে দ্বাদশ কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয় যে এই বিপন্নতার মধ্যে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই, জাতীয় ঐক্য রক্ষার লড়াই এবং সাম্রজ্যবাদী শক্তিকে প্রতিহত করতে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যই দেশকে বাঁচাতে পারে।

এই পার্টি কংগ্রেস থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছিলেন ৭০ জন। পলিট ব্যুরো সদস্য হন ১০ জন – ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ, এম বাসবপুন্নাইয়া, নৃপেন চক্রবর্তী, সরোজ মুখার্জি, হরকিষাণ সিং সুরজিৎ, সমর মুখার্জি, ই বালানন্দন, জ্যোতি বসু, ভি এস অচ্যুতানন্দন, বি টি রণদিভে। সাধারণ সম্পাদক হন ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ।

E M S Namboodiripad

ত্রয়োদশ পার্টি কংগ্রেস  (তিরুবনন্তপূরম -১৯৮৮-৮৯)

২৭ ডিসেম্বর ১৯৮৮ থেকে ১জানুয়ারি ১৯৮৯ পর্যন্ত এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। 

রাজীব গান্ধী সরকারের জনবিরোধী অর্থনৈতিক নীতি, মৌলবাদী তোষণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই কংগ্রেস বাম ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক শক্তিগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে কংগ্রেস(আই) সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে। রাজীব সরকারের হিন্দু ও মুসলিম মৌলবাদী তোষণের রাজনীতির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয় পার্টি। ১৯৭৮ সালে সালকিয়া প্লেনামের পরবর্তী সময়ে পার্টি সংগঠনের অগ্রগতিরও পর্যালোচনা করে ত্রয়োদশ কংগ্রেস। কয়েকটি সমাজতান্ত্রিক দেশের নেতিবাচক প্রবণতার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই কংগ্রেস।

কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হন ৭০ জন সদস্য। পলিট ব্যুরো সদস্য হন ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ, এম বাসবপুন্নাইয়া, নৃপেন চক্রবর্তী, সরোজ মুখার্জি, হরকিষাণ সিং সুরজিৎ,সমর মুখার্জী,ই বালানন্দন,জ্যোতি বসু,ভি এস অচ্যুতানন্দন,বি টি রনদিভে,এ নাল্লাশিবম,এল বি গঙ্গাধর রাও।সাধারণ সম্পাদক হন ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ।

EMS Namboodiripad

চতুর্দশ পার্টি কংগ্রেস (মাদ্রাজ-১৯৯২)

৩ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি,১৯৯২ এই গুরুত্বপূর্ণ পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।বিগত কংগ্রেসের পর সোভিয়েত ইউনিয়ান সহ একাধিক দেশে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ে বিশ্বশক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটে সাম্রাজ্যবাদের অনুকূলে।এই বিশ্বব্যাপী মতাদর্শগত আঘাতের প্রেক্ষাপটে মার্কসবাদ-লেনিনাবাদে অবিচল থাকার প্রশ্নে এই পার্টি কংগ্রেসের গুরুত্ব অপরিসীম। আবার জাতীয় ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব ও ঐক্য বিপন্ন হয়ে পড়ে। উত্থান ঘটে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার। এই প্রেক্ষাপট এই কংগ্রসে মতাদর্শগত সংগ্রামকে জোরদার করার ডাক দিয়ে বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করে বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্পের স্লোগান তোলে। সালকিয়া প্লেনামের পরে পার্টির বৃদ্ধি মূলত অগ্রসর এলাকাতে থাকার দুর্বলতাকে চিহ্নিত করার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ব অংশে পার্টিকে বিকশিত করার রূপরেখা তৈরি করা হয়। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ক্ষেত্রে পরিস্থিতির গুরুতর পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে পার্টি কর্মসূচীকে সময়োপযোগী করার সিদ্ধান্ত হয় এই কংগ্রেসে। এই সম্মেলন থেকে ৬৩জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।পলিটব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন হরকিষাণ সিং সুরজিৎ, ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ, এম বাসবপুন্নাইয়া, জ্যোতি বসু, ই বালানন্দন, ভি এস অচ্যুতানন্দন, নৃপেন চক্রবর্তী, এ নাল্লাশিবম, এল বি গঙ্গাধর রাও, ই কে নায়নার, এস রামচন্দ্রন পিল্লাই, বিনয়কৃষ্ণ চৌধুরী, প্রকাশ কারাত, সীতারাম ইয়েচুরি, সুনীল মৈত্র, পি রামচন্দ্ৰন, শৈলেন দাশগুপ্ত। সাধারণ সম্পাদক : হরকিষাণ সিং সুরজিৎ

H K S SURJEET

পঞ্চদশ পার্টি কংগ্রেস (চণ্ডীগড়- ১৯৯৫)

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে খুব গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল সময়ে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চদশ কংগ্রেস। অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও জাতীয় অখণ্ডতার প্রশ্নে ক্রমবর্ধমান বিপদের সঙ্গে দেশকে আত্মঘাতী পথে টেনে নামাতে চেয়েছিল সাম্প্রদায়িক শক্তি। একদিকে অর্থনৈতিক সংস্কারের নামে জনবিরোধী অর্থনৈতিক নীতির প্রয়োগ অন্যদিকে বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে কাজে লাগিয়ে আরএসএস সাড়া দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়ানোর প্রয়াসের পটভূমিতে আহূত এই কংগ্রেস থেকে বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির তৃতীয় বিকল্প গঠনের ডাক দেওয়া হয়।সাংগঠনিক ক্ষেত্রে ত্রুটিবিচ্যুতি দূর করার জন্য এই কংগ্রেস গোটা পার্টিতে ত্রুটিমুক্তিকরণ অভিযানের ডাক দেয়। পঞ্চদশ কংগ্রেসের অব্যবহিত পরেই ১৯৯৬ সালে নানা বাধা পেরিয়ে এইচ ডি দেবেগৌড়ার নেতৃত্বে অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে গঠিত সংযুক্ত মোর্চার সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন প্রদান করে সিপিআই (এম)। কংগ্রেসও এই সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিতে বাধ্য হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয় ৭১ জন সদস্যর। পলিট ব্যুরো সদস্য হন- হরকিষাণ সিং সুরজিৎ,ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ, ই বালানন্দন, জ্যোতি বসু, ভি এস অচ্যুতানন্দন, এ নাল্লাশিবম, এল বি গঙ্গাধর রাও, ই কে নায়নার, প্রকাশ কারাত, সীতারাম ইয়েচুরি, এস রামচন্দ্রন পিল্লাই, বিনয়কৃষ্ণ চৌধুরী, সুনীল মৈত্র, পি রামচন্দ্রন, শৈলেন দাশগুপ্ত, এম হনুমন্ত রাও। সাধারণ সম্পাদক : হরকিষাণ সিং সুরজিৎ

H K S Surjeet

ষোড়শ পার্টি কংগ্রেস (কোলকাতা-১৯৯৮)

৫ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর ১৯৯৮ এই পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।পঞ্চদশ কংগ্রেসের পর থেকে গোটা দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। সংযুক্ত সরকার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিলেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উদারীকরণকেই অনুসরণ করায় তার জনপ্রিয়তা কমে। শেষে জনতা দল ভেঙে গেলে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বিজেপি পরিচালিত এনডিএ সরকার গঠিত হয়। এই সময় বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে কংগ্রেসকে ইস্যুভিত্তিক সমর্থনের ভিত্তিতে সরকার গঠনের প্রস্তাব দিলে সে প্রয়াস ব্যর্থ হয়। ফলে পরিস্থিতি দেশের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত পার্টি কংগ্রেস বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ব্যাপকভিত্তিক আন্দোলন কর্মসূচী গ্রহণ করে। দেশের ঐক্য ও সংহতির পক্ষে প্রধান বিপদ বিজেপিকে বিজেপি জোট সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সবরকম প্রচেষ্টা চালাবে বলে স্থির করে । প্রয়োজনে কংগ্রেস দলের নেতৃত্বে গঠিত কোনো সরকারকেও শর্তসাপেক্ষে সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির তৃতীয় বিকল্প গঠনের প্রয়াসও জারি রাখার কথা ঘোষিত হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয় ৭৫ জন সদস্যকে নিয়ে। পলিট ব্যুরো সদস্য নির্বাচিত হন- হরকিষাণ সিং সুরজিৎ, জ্যোতি বসু, ই বালানন্দন, বিনয়কৃষ্ণ চৌধুরী, ভি এস অচ্যুতানন্দন, প্রকাশ কারাত, সীতারাম ইয়েচুরি, এস আর পিল্লাই, পি রামচন্দ্রন, ই কে নায়নার, শৈলেন দাশগুপ্ত, আর উমানাথ, এম হনুমন্ত রাও। সাধারণ সম্পাদক হন হরকিষাণ সিং সুরজিৎ।

H K S Surjeet

ছবিঃ কিছুক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ছবি না মেলায় প্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহৃত হয়েছে

Spread the word

Leave a Reply