Stop the NATO-imposed Conflict Immediately – Santanu Dey

সোভিয়েতের বাহাত্তর বছরে কোনও সংকট ছিল না। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মানুষ ছিলেন শান্তিতে। পরস্পরের সঙ্গে ছিল নিবিড় বন্ধুত্ব।

ইউক্রেনের এই ভাঙন যেন নিকোলাই গোগলের রচনা। গোগলের জন্ম ইউক্রেনের গ্রামে। যৌবন কেটেছে জার সাম্রাজ্যের ইউক্রেনে। কিন্তু লিখেছেন রুশ ভাষায়। থেকেছেন সেন্ট পিটার্সবুর্গে। সমাধিস্থ করা হয় মস্কোতে। কেউ কখনও প্রশ্ন তোলেননি। গোগলের সাহিত্যের অর্ধেকটা নিপার তীরবর্তী ইউক্রেন নিয়ে। বাকিটা রাশিয়া নিয়ে। গোগল তুমি কার— বিতর্কের শুরু এই একুশ শতকে, তার জন্মের দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপন নিয়ে। আর এনিয়ে বিভক্ত রুশ ও ইউক্রেনীয় সমাজ।

রেগান তো এমন বলেননি! তিনি তো কত স্বপ্ন ফিরি করেছিলেন।

১২ জুন, ১৯৮৭। বার্লিন প্রাচীরের সামনে দাঁড়িয়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রেগান ঘোষণা করেছিলেন:

‘সাধারণ সম্পাদক গর্বাচ্যভ, আপনি যদি শান্তি চান, আপনি যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরোপের সমৃদ্ধি চান, আপনি যদি উদারীকরণ চান— তবে আসুন এই গেটের সামনে। মিস্টার গর্বাচ্যভ খুলে দিন এই গেট! মিস্টার গর্বাচ্যভ, গুঁড়িয়ে দিন এই প্রাচীরকে।’

নয়া উদারবাদের আলোচনায় তখন ‘স্বাধীনতা’, ‘গণতন্ত্র’ আর ‘শান্তি’। সুখের স্বপ্ন ফিরি। আর এখন, সোভিয়েত-পরবর্তী পূর্ব ইউরোপে দুঃস্বপ্নের দিনরাত। সোভিয়েত ইউনিয়নের অবসানকে রেগান সেদিন বর্ণনা করেছিলেন শান্তি ও সমৃদ্ধির ‘অগ্রদূত’ হিসেবে।

তিনদশক পর, পূর্ব ইউরোপ এবং সাবেক সোভিয়েত ব্লকে না এসেছে শান্তি, না সমৃদ্ধি।

যুদ্ধ ও শান্তির দৃষ্টিকোন থেকে আজ অন্তত একজনও দাবি করতে পারবেন না ১৯৯১-পরবর্তী পর্ব কেটেছে শান্তিতে, বিশেষত ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়ের আপেক্ষিক স্থায়ীত্বের নিরিখে। এই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেপরোয়া ঢঙে সম্প্রসারিত করেছে ন্যাটোকে, রাশিয়ার চৌকাঠ পর্যন্ত।

সোভিয়েত পতনের এক বছর আগে, তৎকালীন মার্কিন বিদেশসচিব জেমস বেকার রাশিয়ার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ‘ন্যাটো পূর্বদিকে এক ইঞ্চি-ও এগোবে না’, যদি মস্কো দুই জার্মানির মিলনে সম্মতি দেয়। পূর্বদিকে এক ইঞ্চি-ও নয় অর্থঃ পূর্ব বার্লিনের পূর্বে ‘এক ইঞ্চি-ও এগোবে না’ ন্যাটো।

গর্বাচ্যভ সেই চুক্তিতে সহমত হয়েছিলেন। কিন্তু, ওয়াশিংটন তার কথা রাখেনি।

সেদিন সবাই আশা করেছিলেন এবারে ন্যাটোকে গুটিয়ে দেওয়া হবে। কারণ, যে উদ্দেশে ন্যাটো তৈরি করা হয়েছিল, সেই সোভিয়েত ইউনিয়নই আর নেই। তাছাড়া, ন্যাটোর মোকাবিলার লক্ষ্যে যে ওয়ারশ চুক্তি হয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইয়োরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির বিপর্যয়ের পর তারই যখন অবসান হয়েছে, তখন ন্যাটোর প্রাসঙ্গিকতা আর কোথায়? ধাপে ধাপে নিরস্ত্রীকরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি কমানোর চুক্তিও সই হয়ে গিয়েছে। সেকারণে স্বাভাবিক ভাবনা ছিল ন্যাটোর আর কোনো প্রয়োজন নেই।

ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর পেরিয়ে গিয়েছে তিন দশক। ন্যাটোকে কেন সম্প্রসারিত হচ্ছে? ভেঙে দেওয়ার পরিবর্তে কেন সে নিজেকে সম্প্রসারিত করে চলেছে? ওয়ারশ নেই, তবে ন্যাটো কেন? আজ সোভিয়েত নেই, তাহলে শত্রু কে?

লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং এস্তোনিয়ার মতো বাল্টিক রাষ্ট্র-সহ পোলান্ড, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, চেক সাধারণতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, স্লোভানিয়া, রোমানিয়ার মতো পূর্ব ইয়োরোপের সাবেক ‘সোভিয়েত’ সাধারণতন্ত্রগুলির অধিকাংশই এখন ন্যাটোর শৃঙ্খলে। যুগোস্লাভিয়ার উপর বর্বর বোমাবর্ষণ-সহ ন্যাটো একাধিক যুদ্ধ চালিয়েছে বলকান অঞ্চলে। আর এখন রাশিয়া সীমান্তে ইউক্রেন, জর্জিয়াকে তাদের সদস্য করতে চাইছে।

১৯৯০ থেকে ন্যাটো আজ বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সদস্য সংখ্যা ষোল থেকে বেড়ে এখন ৩০। পূর্ব ইয়োরোপ, বলকান ছাড়িয়ে এমনকী সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে আফ্রিকায়। এবং মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ায়। আফগানিস্তানে ন্যাটো’র বর্বরতাকে দেখেছে গোটা দুনিয়া। নামে নর্থ অতলান্তিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন। কোথায় উত্তর অতলান্তিক, আর কোথায় কাবুল!

বর্ষশেষের সাংবাদিক বৈঠকে পুতিন সরাসরি প্রশ্ন তুলেছিলেন: ‘আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, পূর্ব দিকে ন্যাটোর আর কোনো অগ্রগতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর এতে কী কোনো অস্পষ্টতা রয়েছে? আমরা কী মার্কিন সীমান্তের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে গিয়েছি? না, আমরা তো যাইনি। বরং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই তার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আমাদের ঘরে এসেছে, দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দোরগোড়ায়। আমাদের ঘরের কাছে কোনো আঘাত করার ব্যবস্থা রাখা যাবে না, এই দাবি করা কী তাহলে ভুল হবে, খুব অস্বাভাবিক হবে?’

দায়ী তাহলে কে? কেন লাগাতার যুদ্ধের প্ররোচনা দিয়ে গেল ওয়াশিংটন, লন্ডন? ঠিক যেমন প্রচার তোলা হয়েছিল ১৯৯৯-তে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিরুদ্ধে, ২০০১ সালে আফগানিস্তান, ২০০৩ সালে ইরাক এবং ২০১১-তে লিবিয়া এবং সিরিয়ার বিরুদ্ধে।

এখন চীন যদি মেক্সিকোকে নিজের পক্ষে টেনে মেক্সিকোর মাটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র তাক করে ওয়াশিংটন-নিউইয়র্কে আঘাত হানার বন্দোবস্ত করতে চায়, তাহলে আমেরিকা কি বসে থাকবে?

কে না জানেন আজকের রাশিয়া একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র। ক্রেমলিনে এখন ‘নব্য জার’! একটি সুপার রাষ্ট্রপতি-কেন্দ্রিক সাধারণতন্ত্র। একনম্বর ব্যক্তির হাতে জার ও সাধারণ সম্পাদকের মিলিত ক্ষমতার চেয়ে বেশি ক্ষমতা। শেষ কুড়ি বছরে ক্রেমলিনে ক্ষমতার কোনও পরিবর্তন হয়নি। একটা পুরো প্রজন্মই বেড়ে উঠেছে একজন রাষ্ট্রপতি এবং একটি শাসকদলের অধীনে।

কর্পোরেট মিডিয়া যতোই প্রচার চালাক, রাশিয়া এখন আর আদৌ ‘সুপারপাওয়ার’ নয়।

আজ, রাশিয়া একটি পুঁজিবাদী দেশ হিসেবে এমনকি পঞ্চম-বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিও নয়। রাশিয়ার অর্থনীতি ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া, এমনকি কানাডার চেয়েও ছোট। জিডিপি’র মাপকাঠিতে রাশিয়ার স্থান এখন ১১।

আবারও এও ঠিক, রাশিয়া একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হলেও, তা সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র নেয়নি। তামাম দুনিয়াতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির সংখ্যা ৮০০’র বেশি, আমেরিকার বাইরে আছে ৩,০০,০০০ মার্কিন সেনা, যেখানে রাশিয়ার একটি মাত্র নৌ ঘাঁটি রয়েছে সিরিয়াতে, আর কিছু কমিউনিকেশান সেন্টার আছে সাবেক সোভিয়েত সাধারণতন্ত্রগুলিতে।

ইউক্রেনের বর্তমান জমানা ২০১৪’র গোড়ায় এক অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা দখল করে। ইউক্রেনিয়, নব্য-নাৎসিসহ রুশবিরোধী জাতীয়তাবাদী শক্তি যে নতুন জমানা প্রতিষ্ঠা করে, তাকে সমর্থন জানায় ওবামা প্রশাসন। রুশবিরোধী এই রাষ্ট্র সঙ্গে-সঙ্গেই হামলা চালায় ইউক্রেনে বসবাসকারী সংখ্যালঘু রুশ-বংশোদ্ভূতদের উপর, যাঁদের অধিকাংশেরই বাস দেশের পূর্বদিকে, রাশিয়া সীমান্তে। আত্মরক্ষায় ডনবাস অঞ্চলের দুই প্রদেশ দনেৎস্ক ও লুহান্‌স্ক স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিয়েভ তাদের দমনে সেনা পাঠায়। কিন্তু তখনই স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি মস্কো। জার্মানি, ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় মিনস্ক চুক্তি হয়। সেখানে বলা হয় ইউক্রেন এই দুই অঞ্চলকে স্বায়ত্তশাসন দেবে। কিন্তু ইউক্রেন সে-পথে হাঁটেনি। উলটে দেশের সংবিধান এমনভাবে পরিবর্তন করে যাতে স্বায়ত্তশাসন অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর হাতে গত ছ’বছরে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৪ হাজার মানুষ। দনেৎস্ক ও লুহান্‌স্ককে ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এই ফেব্রুয়ারিতেই রুশ সংসদে দাবি জানায় রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি। ৫৭ জন সাংসদ নিয়ে দুমায় দ্বিতীয় বৃহত্তম দল কমিউনিস্ট পার্টি। শেষে দুই অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেয় মস্কো। আর তারপরেই তাদের সঙ্গে রুশ সরকারের চুক্তি হয়। মস্কোর বক্তব্য, সেইমতো তারা এই দুই অঞ্চল রক্ষায় ইউক্রেনে ‘বিশেষ অভিযান’ চালিয়েছে।

কোনও সুস্থ মানুষই যুদ্ধ চান না। শান্তিই হোক অগ্রাধিকার। যেমন বলেছিলেন ইউক্রেনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক পেত্রো সিমোনেঙ্কো। ‘শান্তিপূর্ণ পথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ডনবাস সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত’ বলে দাবি জানিয়েছিলেন।

‘গত সাতবছর ধরে নিরাপত্তা পরিষদ কেন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতিকে একবারের জন্যও আমন্ত্রণ জানাল না, যাতে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ নিস্পত্তির জন্য তিনি কী করেছেন, তা নিয়ে রিপোর্ট করতে পারেন? কেন একের পর এক সমরাস্ত্র-বোঝাই মার্কিন ও ব্রিটিশ বিমান কিয়েভে (ইউক্রেনের রাজধানী) নামছে? ওরা কী আদৌ শান্তি চায়?’ প্রশ্ন তুলেছিলেন পেত্রো সিমোনেঙ্কো।

আসলে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পোলান্ডের মধ্যে সম্প্রতি হয়েছে একটি ‘ত্রিপাক্ষিক সামরিক জোট’, যার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ‘ইউক্রেনের নাৎসি-অলিগার্কের শাসক জমানা’। সিমোনেঙ্কোর বক্তব্য, ‘আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজির নির্দেশে নতুন করে ইয়োরোপের পুনর্বণ্টনের লক্ষ্যেই’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর এই তৎপরতা। আর নেপথ্যে রয়েছে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এবং ব্রিটিশ সংস্থা এম ১৬।

নাহলে, ‘কেন ২০০০ সালে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি লন্ডনে এম ১৬-র প্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন? আর কেনই বা এবছর জানুয়ারিতে কিয়েভে সিআইএ-র প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন?’

রেগান থেকে বাইডেন। এবং ইউক্রেন। এই সংঘাত তাই নিরপরাধ অসহায় মানুষের উপর ন্যাটো’র চাপিয়ে দেওয়া সংঘাত। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য বিস্তারের অবধারিত পরিণতি। দুঃখজনক হলো, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযান। অবিলম্বে তা বন্ধ হওয়া উচিত। আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা উচিত।

এই সংঘাত অনায়াসে এড়ানো যেতো, যদি মার্কিন প্রশাসন/ন্যাটো ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার স্বাভাবিক নিরাপত্তা-উদ্বেগকে মেনে নিত। ন্যাটো ইউক্রেনকে তার সদস্য করতে চাইছে, যার অর্থ রুশ সীমান্তে থাকবে মার্কিন/ন্যাটোর বাহিনী, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র! তারপরেও, এই সংঘাত বন্ধ হওয়া একান্তভাবেই জরুরি।

শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলসহ সমস্ত মানুষের প্রকৃত উদ্বেগের সমাধান করা উচিত। পুনরায় শুরু করা উচিত আলোচনার প্রক্রিয়া। এবং উভয় পক্ষেরই আগের চুক্তিগুলি মেনে চলা উচিত।

Spread the word

Leave a Reply