Birsa Munda and His-Story Of A Real Hero Of India

সুপ্রতীক রায়

Birsa Munda

আজ মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা বিরসা মুন্ডার জন্মদিন। পরাধীন ভারতবর্ষে যে আদিবাসী-কৃষক বিদ্রোহগুলি  হয়েছিল সেগুলির মধ্যে অন্যতম মুন্ডা বিদ্রোহ অন্যতম।মুন্ডারা সিংভূম,রাঁচি,হাজারিবাগ ও সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে বাস করতেন।চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব ভারতে দরিদ্র কৃষক ও আদিবাসীদের উপর চরম শোষন নামিয়ে এনেছিল। মুন্ডারাও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পরবর্তী ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার দ্বারা শোষিত হয়ে বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়েছিল। এই বিদ্রোহের নেতা ছিলেন বিরসা মুন্ডা।বিরসার নেতৃত্বে বিদ্রোহ ছিল একদিকে সামন্ত শোষনের বিরুদ্ধে অন্যদিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। মুন্ডাদের সঙ্গে ইংরাজদের সংঘাত ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে সূচনা হলেও বিরসা মুন্ডা নেতৃত্ব গ্রহন করার পর তা সর্বাত্বক রূপ গ্রহন করে।

   ১৮৭৫ সালের ১৫নভেম্বর রাঁচি জেলার উলিহাত গ্রামে বিরসার জন্ম। তাঁর বাবার নাম সুগান মুন্ডা এবং মায়ের নাম কার্মি মুন্ডা। কাজের সন্ধানে বিরসার পরিবার চলে আসে বাম্পা গ্রামে। বিরসা পরবর্তীকালে তাঁর পিতৃব্যের গ্রামে চলে আসেন। তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এই বিদ্যালয়টি যিনি পরিচালনা করতেন তাঁর নাম জয়পাল নাগ। বিরসার মেধা ও আগ্রহ দেখে জয়পাল বিরসাকে চাইবাসার একটি মিশনারী বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। ঐ বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহন করতে হোত।তাঁর নাম হয় বিরসা ডেভিড। এরপর বিরসা আনন্দ পান্ডে নামক এক বৈষ্ণব গুরু সান্নিধ্য লাভ করেন। বিরসার মধ্যে বৈষ্ণব ভাবনা প্রভাব বিস্তার করেছিল। তিনি রামায়ন,মহাভারত সহ বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করেছিলেন। ফলে বিরসার মধ্যে মুন্ডাধর্ম ছাড়াও হিন্দু ও  খ্রীষ্টান ধর্মের প্রভাব পড়েছিল। ফলে বিরসার প্রবর্তিত ধর্মে সমন্বিত চেতনা প্রতিফলিত হয়েছিল।

১৮৯০ এর পরবর্তীকালে বিরসা লড়াই-আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা গ্রহন করেছিলেন। ১৮৮২ সালের অরণ্য আইনের সপ্তম ধারাতে বনাঞ্চল সহ পতিত জমিকে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ হিসাবে ব্রিটিশ সরকার ঘোষনা করে। মুন্ডারা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ১৮৯৪ সালে বিরসার নেতৃত্ব ও পদক্ষেপ মুন্ডাদের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়েছিল।মুন্ডা কৃষকশ্রেণির একেবারে নিম্নস্তর থেকে উঠে এসে মুন্ডা বিদ্রোহের জনপ্রিয় নেতা হয়েছিলেন।বিরসার পরিবার খুবই দরিদ্র ছিলো,’খুৎকাঠি প্রথা’রও সুযোগ পাননি। বিরসা বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে মুন্ডাদের  আসল সমস্যাগুলি বুঝতে পেরেছিলেন, যা তাঁর পরবর্তীকালে আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহনে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছিল।

সামন্তপ্রভুদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ের মাধ্যমে ‘স্বাধীন মুন্ডারাজ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই মুন্ডা বিদ্রোহ পরিচালিত হয়েছিল। মুন্ডা বিদ্রোহের মূলে ছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের নেতিবাচক প্রভাব।গরিব চাষীদের উপর লাগামছাড়া শোষনই ছিল মুন্ডা বিদ্রোহের মূল কারন। বিপুল পরিমাণ খাজনা চাপানো হতো। এই খাজনা আদায়ের নামে মুন্ডাদের উপর নির্যাতন নামিয়ে আনা হতো। খাজনা ছাড়াও চাষীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে আদায় করা হতো ‘আবওয়াব’ বা খাজনা-অতিরিক্ত কর। মুন্ডাদের একমাত্র জীবিকা ছিল চাষবাস। খাজনার পরিমান ও আদায় না হলে অত্যাচার দুটিই বিদ্যুৎের গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। খাজনার পরিমান এতটাই বেশি ছিল যে উৎপাদিত সমস্ত ফসল দিয়েও খাজনা মেটানো যেতো না। ‘আবওয়াব’-র নামে অত্যাচার মুন্ডাদের আরও সঙ্কটে ফেলেছিল।মুন্ডাদের জমির মালিকানা ছিল বংশানুক্রমিক। খাজনা শোধ না হওয়ার কারনে জমিদারেরা তাদের জমি কেড়ে নিতে থাকে। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ‘ভুঁইহারি’জমি নানা কায়দায় জমিদারেরা নিয়ে নেয় এবং তাদের ‘মাঝি হাঁস’ বা নিজস্ব ভোগজমির অন্তর্ভূক্ত করে নিতে থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ব্রিটিশ সরকার কর্তৃকস১৮৬৮ সালে ভূমি-সংক্রান্ত তদন্তের নির্দেশ। বলা বাহূল্য গ্রামের কোন জমি যথার্থ ‘ভুইহারি’ তা ঠিক করতে ১৮৬৮ সালে ভূমি বিষয়ক তদন্তের নির্দেশ দেয়-১৮৬৯ সালে এই সংক্রান্ত একটি বিশেষ আইন পাশ করে। ১৮৮০ সালের মার্চ পর্যন্ত তদন্ত চলে।এই তদন্ত মুন্ডাদের লাভের পরিবর্তে ক্ষতি করেছিল। ক্রমাগত জমিদাররা মুন্ডাদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি করতে থাকে। জমিদাররা মুন্ডাদের কার্যত দাস প্রথায় বেঁধে ফেলেছিল। মুন্ডাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল ।

খাজনা এবং জমিদারদের চাহিদা মতো বেগার শ্রম না দিতে পারলে মুন্ডাদের বাসভূমি এবং জোত জমি কেড়ে নেওয়া হতো।বাসভূমি থেকে মুন্ডাদের উচ্ছেদ হওয়ার সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত ছিল।মুন্ডাদের পরিবারের কেই মারা গেলে বাসভূমিতেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হতো।তাই বাস্তুভিটের মাটি মুন্ডাদের কাছে ছিল পবিত্র।

মুন্ডাদের জোরপূর্বক খ্রীষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করার প্রক্রিয়া ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল।মিশনারিরা মুন্ডা ধর্ম ও  ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে কুৎসা করতে থাকে।প্রলোভন এবং ভয় দেখিয়ে মুন্ডাদের খ্রিষ্টধর্মে  দীক্ষিত করা হতে থাকে।

বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে মুন্ডা বিদ্রোহের উপরিউক্ত কারনগুলি কাজ করলেও হঠাৎ করেই এই বিদ্রোহ শুরু হয়নি।মুন্ডাদের উপর ব্রিটিশ রাজ শুরু হওয়ার পর অনেকগুলি বিদ্রোহ হয়েছিল:-কোল বিদ্রোহ,সর্দার  বিদ্রোহ প্রভৃতি।প্রায় চার দশক ধরে চলে আদিবাসী বিদ্রোহে সামিল হয়েছিলেন ব্যাপক সংখ্যক আদিবাসীরা। ১৮৯৮ সালে আদিবাসী নেতৃত্ব (সর্দার) ও ইংরাজদের মধ্যে এক বৈঠকে স্থির হয়েছিল জমির খাজনা বৃদ্ধি করা হবে না এবং অরণ্য সম্পদ আদিবাসীদের ব্যবহার করার  অধিকার থাকবে।কিন্তু  প্রতিশ্রুতি পালিত না হওয়ায় ১৮৯৯ এ বিরসার নেতৃত্বে মুন্ডা বিদ্রোহের আগুন  জ্বলে ওঠে।

মুন্ডা বিদ্রোহে বিরসা মুন্ডার ভূমিকা আলোচনা করতে গেলে তাঁর ধর্মমত নিয়ে আলোচনা না করলে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হতে পারে না। মুন্ডাদের প্রচলিত ধর্মের সঙ্গে সংযোগ রেখেই বিরসা এক নতুন ধর্মের কথা ঘোষনা করেছিলেন।তাঁর ধর্মের নির্যাস ছিল:ভালোবাসা,আত্মশুদ্ধি ও সমবেত প্রার্থনা। বিরসা দাবি করেন মুন্ডাদের প্রধান দেবতি ‘সিং বোঙা’র থেকে প্রত্যাদেশ পেয়ে নতুন ধর্ম প্রচার করছেন। তিনি নিজেকে ‘ধরতি আবা’বা ‘পৃথিবীর পিতা’ বলে ঘোষনা করেন। তিনি আরও বলেন সমস্ত জমির অধিকার ঈশ্বরের। মুন্ডারা বিরসার এই ঘোষনার পর জমিদারদের খাজনা ও কর দেওয়া বন্ধ করে দেন। বিরসা মুন্ডা চার্চ,ব্রিটিশ ও সামন্ত প্রভুদের বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।

বিরসা সমগ্র মুন্ডা সমাজের অবিসংবাদিত নেতায় পরিনত হয়েছিলেন। তিনি ক্রমশ ভগবানে পরিনত হয়েছিলেন।বিরসার ধর্মমত এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে মুন্ডা সমাজ ছাড়াও নিম্নবর্গের হিন্দুরাও আকর্ষিত হয়েছিলেন। বিরসার মুন্ডাদের প্রতি কয়েকটি নির্দেশ ব্রাহ্মণ্যবাদ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুন্ডাদের প্রতিরোধের ভাষা জুগিয়েছিল। কি ছিল সেই নির্দেশাবলী?

১. মুন্ডাদের মদ্যপান নিষিদ্ধ, ২. সবধরনের কুসংষ্কার ত্যাগ করতে হবে, ৩. ব্রাহ্মনদের মতো গলায় পবিত্র সূত্র ধারন করতে হবে, ৪. সুন্দর,পরিচ্ছন্ন, নির্মল গ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

১৮৯৫ সালে বিরসা খ্রীষ্ট ধর্ম ত্যাগ করেন। নিজেকে’ধরতি আবা’বলে ঘোষনা করেন এবং’স্বাধীন মুন্ডারাজ’প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষনা করেন। এই ‘স্বাধীন মুন্ডারাজ’-র ঘোষনা ছিল আসলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন, খ্রিষ্টবাদ, হিন্দু ব্রাহ্মণবাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। এটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার বিরসার ধর্মমত আসলে একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশল। মূল লক্ষ্য ছিল বৃহত্তর মুন্ডা সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা। বিরসার আন্দোলন ছিল একই সঙ্গে জমিদার-মহাজন শোষন, খ্রিষ্টান মিশনারীদের আগ্রাসন এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের বিরূদ্ধে।

মুন্ডারা জমিদার ও মহাজনদের কর দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আইন-শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা কার্যত দখল করে নিয়ে ব্রিটিশ রাজশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। গ্রামে গ্রামে মুন্ডাদের প্রচার মুন্ডা নন এমন প্রান্তিক অংশের, নিম্নবর্গের মানুষদেরও অনুপ্রাণিত করেছিল।

বিরসার আন্দোলনকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে। ১৮৯৫-র বিদ্রোহ এবং ১৮৯৯-র বিদ্রোহ। বিরসা শ্লোগান দিয়েছিলেন, “আবুয়া রাজ স্তে জানা,মহারাণী রাজ তান্ডু জানা”। অর্থাৎ, মহারানীর রাজত্ব শেষ হোক আমাদের রাজত্ব শুরু হোক। ১৮৯৫-এ প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয় ডোমবারি পাহাড়ে। বিশাল জমায়েতে বিরসা মুন্ডা সমাজকে বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদিও বিরসাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৮৯৭ সালে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি পেয়েই তিনি মুন্ডাদের সংগঠিত করতে থাকেন। তিনি চুটিয়া মন্দির আক্রমন করেন। অবশ্য পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যান বিরসা। ১৮৯৭-৯৯বিরসা গোপনে সাংগঠনিক কাজ করেন। ১৮৯৯ সালে ‘উলগুনাল’বা মুন্ডা বিদ্রোহের মূখ্য নেতৃত্ব হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন বিরসা।

ডোমবারি পাহাড়ে মুন্ডারা সমবেত হতেন এবং তাঁদের সামনে বিরসা বক্তব্য রাখতেন।সেইল রাকাব গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল ইংরাজ বিরোধী যুদ্ধ। গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ পরিচালিত হতো। এই পাহাড়ি গ্রামকে কেন্দ্র করে মুন্ডারা রাঁচি এবং খুঁটি পর্যন্ত বিদ্রোহকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। শতাধিক সরকারি অফিস অগ্নিসংযোগ  করে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। অনেক পুলিশকে হত্যা করা হয়েছিল। ভীত ব্রিটিশ প্রশাসন বিরসার মাথার দাম ধার্য করেছিল ৫০০টাকা। ব্রিটিশ পুলিশ ডোমবারি পাহাড় ঘিরে বিদ্রোহীদের উপর গুলি বর্ষন করে। প্রায় ৪০০ মুন্ডা নিহত হন। এই পাহাড়কে ‘মৃতের পাহাড়’ বলে অভিহিত করা হয়। ৩মার্চ,১৯০০ ঘুমন্ত অবস্থায় বিরসাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরও ৪৬০জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ৬৩ জনকে দন্ডিত করা হয়, ১জনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়,৩৯ জনকে আজীবন দীপান্তরিত এবং ২৩জনকে চোদ্দ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়।বন্দী অবস্থাতেই ১৯০০সালের ৯জুন কলেরাতে  মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে বিরসার মৃত্যু হয়।কিন্তু কারাগারে অমানুষিক নির্যাতনই বিরশার মৃত্যুর কারন বলে কোনো কোনো গবেষনায় উঠে আসছে।

বিরসার মৃত্যুর পর আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ে। ভারতবর্ষের শিক্ষিত উচ্চবিত্তও মধ্যবিত্ত শ্রেণি যখন সভা সমিতি আর আবেদন নিবেদনের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন তখন মুন্ডা বিদ্রোহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। মুন্ডা বিদ্রোহের ফলেই আদিবাসীদের জমির যৌথ মালিকানার ‘খুঁৎকাঠি প্রথা’কে মান্যতা দিয়ে ১৯০৮ সালে ব্রিটিশ ‘ছোটনাগপুর প্রজাসত্ত্ব আইন’ পাশ করে। যার ফলে মুন্ডাদের জমি কেড়ে নেওয়ার উপর আইনি নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।বেগার শ্রম বা ‘বেটবেগারি’ প্রথার অবসান হয়।

বিরসা মুন্ডার আদর্শ গভীর ছাপ রেখে গেছে ব্রিটিশ বিরোধী ও সামন্তবাদ বিরোধী লড়াইয়ে। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে একথা দৃঢ় ভাবে বলা যায়, মুন্ডা বিদ্রোহের কেন্দ্রে ছিল ব্রিটিশ বিরোধিতা। বিরসার লড়াই মহাজন, জমিদার ও ঔপনিবেশিক শোষনের বিরুদ্ধে। ধর্মীয় আবরন ছিল কৌশল মাত্র। এটা প্রমানিত হয় ফাদার Hoffman এর এক চিঠিতে। ডোমবারি পাহাড়ে মুন্ডাদের বিশাল সমাবেশ দেখে তিনি কমিশনার Mr.Forbes কে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, “….ধর্মকে ব্যবহার করে বিরসা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।…”মিশনারি, জমিদার, মহাজন, বৃটিশ এই চারের বিরুদ্ধেই গর্জে উঠেছিলেন বিরসার নেতৃত্বে মুন্ডারা। বিরসার প্রভাব কেবল মুন্ডা সমাজেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বিরসা জীবন দিয়ে শোষকের চরিত্র তুলে ধরেছিলেন।

বিরসা মুন্ডার লড়াই আজও প্রাসঙ্গিক। কর্পোরেট সেবায় নিবেদিত মোদি-মমতা আদিবাসীদের জমি থেকে উৎখাত করে চলেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। জমি,জঙ্গল কর্পোরেটদের জলের দরে বিক্রি করা হচ্ছে। দেউচা-পাঁচামির ঘটনা প্রমান করেছে মমতা ব্যানার্জি আদিবাসীদের কি চোখে দেখেন।

অন্যদিকে দেশজুড়ে কর্পোরেট তন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ছে বামপন্থীরা। চলতি কৃষক আন্দোলন কর্পোরেট রাজ খতম করার লক্ষ্যে আপোষহীন,দীর্ঘস্থায়ী লড়াই। নভেম্বর মাস জুড়ে গ্রামীন পদযাত্রা শ্রেনী লড়াই তীব্র করার অভিমুখে পরিচালিত হচ্ছে। শ্রেনীর দাবিতে আপোষহীন লড়াই বর্তমান রাজনৈতিক ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। বিকল্প সহজ শটকার্ট রাস্তা নেই।

বিরসা মুন্ডার জন্মদিনে শ্রেনী সংগ্রামকে তীব্র করার অঙ্গীকার গ্রহন করি।

Spread the word

Leave a Reply