Bolsonaro Go Away!!!

26 January, 2020

আসল ট্রাম্পকে না পেয়ে ‘ব্রাজিলের ট্রাম্প’!
গতবছর মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সময় দিতে পারেননি ট্রাম্প। সটান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মোদীর প্রস্তাব।
এবারে তাই ‘ব্রাজিলের ট্রাম্প’। জেইর বোলসোনারো।
সগর্বে যিনি দাবি করেন, চিলির স্বৈরশাসক পিনোচেতের ‘আরও লোক মারা উচিত ছিল।’
ব্রাজিলের সামরিক শাসনের পাশে দাঁড়িয়ে যিনি বলেন, ‘স্বৈরতন্ত্র’ ভালো ছিল, না হলে ‘ব্রাজিল দোল খেত সোভিয়েত ইউনিয়নের কোলে।’ হত্যা করা উচিত ছিল ‘রাষ্ট্রপতি ফার্নান্দো হেনরিকো কারদোসো থেকে সংসদের প্রতিনিধিসহ আরও ৩০,০০০ মানুষকে।’
হিটলারের মতো যিনি মনে করেন বিরোধীদের কোনও বৈধতা থাকতে পারে না। বামপন্থীরা তাঁর কাছে গণতন্ত্রের ‘অ্যান্টিথিসিস’।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বোলসোনারোর প্রথম বিদেশ সফর ইজরায়েল। বিমানবন্দরে নেমে বলেছেন: ‘আমি ভালোবাসি ইজরায়েলকে।’ প্যালেস্তাইনকে মনে করেন না পৃথক রাষ্ট্র। স্বাভাবিক। আর সেই যুক্তিতে সেখানে দূতাবাস বন্ধ করতে চান। ট্রাম্পের পথে হেঁটে এবছরের মধ্যেই ব্রাজিলের দূতাবাস তেল আভিভ থেকে সরিয়ে আনতে চান জেরুজালেমে।
সংসদীয় অভ্যুত্থানে যেদিন ভর্ৎসিত হয়েছিলেন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দিলমা রুসেফ, সেদিন রূদ্ধশ্বাস নাটকীয়তায় তুমুল উচ্ছ্বাসে নির্লজ্জভাবে বোলসোনারো তাঁর ভোট উৎসর্গ করেছিলেন স্বৈরতন্ত্রের জমানায় জেলে বন্দি দিলমা, যে সেনা অফিসারের হাতে নির্যাতিত হয়েছিলেন, সেই কর্নেল কার্লোস ব্রিলহানতে উসত্রাকে, যিনি ছিলেন ব্রাজিলের স্বৈরাচারী জমানায় দোই-কোদি টর্চার ইউনিটের প্রধান।
সেদিন তাঁর সাংসদ পুত্র এদুয়ার্দো বোলসোনারো মাইক্রোফোন হাতে তুলে নিয়ে কুর্নিশ জানিয়েছিলেন ১৯৬৪’র সামরিক অভ্যুত্থানের জেনারেলকে। বলেছিলেন, তিনি তাঁর ভোট উৎসর্গ করছেন ১৯৬৪’র সামরিক শাসকদের উদ্দেশে: ‘ওরা হেরেছে ৬৪-তে, ওরা হারল ২০১৬-তে।’
ফ্যাসিস্ত পূর্বসূরীদের মতো তিনি মনে করেন এই ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক জমানাই প্রকৃত গণতন্ত্র, যেখানে থাকবে না কোনও নির্বাচনের বালাই। বোলসোনারোর মডেল তাই বার্লুসকোনির নয়, গোয়েবলসের মডেল।
কট্টর দক্ষিণপন্থী বোলসোনারো উগ্র নারীবিদ্বেষী, বর্ণবিদ্বেষী। প্রকাশ্যেই বিষোদগার করেন সমকামীদের।
ব্রাজিলের কংগ্রেসে একজন মহিলা সাংসদ যখন তাঁকে ‘ধর্ষক’ বলে অভিযুক্ত করেন, তখন বোলসোনারে বলেন: ‘আমি তোমায় ধর্ষণও করতে চাই না, কারণ তুমি তার যোগ্য নও।’
উগ্র নারীবিদ্বেষী বোলসোনারো মনে করেন মেয়েদের মজুরি-বেতন কম হওয়া উচিত, কারণ তাদের ‘অন্তঃসত্ত্বা’ হতে হয়।
তিনি বলেন, সমকামী হওয়ার চেয়ে তার সন্তানের মৃত্যু অনেক ভালো।
‘নিজেকে সমকামী বলার চেয়ে হিটলার হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করেন’ তিনি।
‘ব্রাজিলের ট্রাম্প’ আমাজনে চান শিল্পায়ন। নয়া উদার অর্থনীতির আগ্রাসী রূপ। এই অরণ্যকে উন্মুক্ত করে দিতে চান অ্যানিমেল এগ্রিকালচার এবং মাইনিংয়ের জন্য। এই অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়েই নির্মাণ করতে চান জাতীয় সড়ক। এই পৃথিবীকে ধ্বংসের পথ।
প্রতিদিন ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হচ্ছেন আদি জনগোষ্ঠীর মানুষ। অন্যদিকে, বিনিয়োগের জন্য বার্তা দিয়ে বোলসোনারো বলেছেন, ‘অতিরিক্ত এক সেন্টিমিার জমিও আর ওরা পাবেন।’
চলছে বেপরোয়া বেআইনি খনন। দূষিত হচ্ছে নদী। ঝর্না। এই নির্বিচার খননের পক্ষে জোরালো সওয়াল করে চলেছেন বোলসোনারো। তাঁর দাবি, অর্থনীতির জন্য ভীষণ জরুরি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসে উত্তর সম্পাদকীয়তে অসহায় আর্তনাদ: সেভ দি আমাজন ফর্ম বোলসোনারো।
বিপরীতে বোলসোনারো আর তার পরিবেশমন্ত্রী রিকার্দো মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তন ‘গৌণ বিষয়’।
আর আটজন প্রাক্তন পরিবেশমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বিচারে জঙ্গল সাফ সত্যিকারের ঝুঁকি। শুধু ব্রাজিলের জন্য নয়। বোলসোনারে মানে এই গ্রহের জন্য সর্বনাশ।
এহেন বোলসোনারো সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি!
দেশজুড়ে তাই স্লোগান ‘বোলসোনারো দূর হটো’।

Spread the word

Leave a Reply