7782 Mile: A Revolutionary Connection

৭৭৮২ মাইল

শমীক লাহিড়ী

১৬ফেব্রুয়ারী, ২০২১

২৫শে মে, ২০২০। মনে পড়ে?

জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গকে গ্রেপ্তার করার নামে তার গলাটা হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেছিল পুলিশ অফিসার।

জর্জের শেষ কথা ছড়িয়ে পড়েছিল পৃথিবীর আনাচে কানাচে – I can’t breath. আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।

ট্রাম্প যথারীতি পুলিশের পাশে। এটাই ফ্যাসিস্টদের রীতি।

মনে পড়ছে জিয়ান্না ফ্লয়েড নামে ফুলের কুঁড়ির মতো একটা মুখ? শুধু বলেছিল – I miss him. ৬বছরের শিশু জানেনা, মৃত্যু কি! সে যে চিরতরে কেড়ে নিয়েছে তার বাবাকে, সেটা বোঝেনি।

মইদুল ইসলাম মিদ্দ্যা। পুলিশ পিটিয়ে পিটিয়ে মারলো ওকে। কমরেডদের কোলে মাথা রেখে বলেছিল – আমি আর বাঁঁচবুনি!

শুভাইয়া আসমিন ১০ বছর বয়স। কিছুটা বোঝে – ফিরবে না আর তার বাবা। সুমি খাতুন ঠিক যেন ৬ বছরের জিয়ান্না ফ্লয়েড। বাবাকে খুঁজবে শুধু। আর ১ বছরের ছোট্ট কুঁড়িটা – রেজকা খাতুন শুধুই খুঁজে বেড়াবে বাপের ঘামের গন্ধ।

ওখানে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ছিল – আন্দোলন বন্ধ না হ’লে মিলিটারি নামাবো।

এখানে স্বৈরাচারী মূখ্যমন্ত্রীরও একই কথা – ছাত্র-যুব নেতাদের নামে পুলিশ দিয়ে সমন পাঠিয়ে জেলে ভরার হুমকি।

তফাৎ ৭৭৮২ মাইলের। কিন্তু স্বৈরশাসকদের চেহারা একই। কথাও একই।

জেটপ্লেনে লাগাতার উড়লে ২৫ ঘন্টার যাত্রাপথ – কলকাতা থেকে মিনিয়াপোলিস।

ভূগোলের দূরত্ব যতই হোক, স্বৈরশাসক আর আন্দোলনের যাত্রাপথও কিন্তু একই হয়।

ওখানে ট্রাম্প আজ আস্তাকুঁড়ের জীব। এখানেও তার ব্যতিক্রম হবে না।

ডাক্তার ফুয়াদের চিকিৎসা কেন্দ্রে ১১ই ফেব্রুয়ারী তোমার সাথে প্রথম দেখা, প্রথম কথা। সেটাই শেষ দেখা, শেষ কথা হবে – ভাবিনি।

মইদুল, তুমি ঘুমাও। তোমার ফুলের মতো ৩ কন্যার দায়িত্ব তারাই নিয়েছে – যাদের তুমি কমরেড বলো। তোমার সোহাগি স্ত্রী আলিয়া বিবি তোমাকে ফিরে পাবে না। কিন্তু তোমাকে খুঁজে পাবে কমরেডদের দৈনন্দিন যাতায়াতে।

আমরা সুদীপ্তকে খুঁজে পেয়েছিলাম ১১ ফেব্রুয়ারী ধর্মতলায়। তোমাকেও দেখতে পাবো প্রতিদিনের লড়াইতে।

মইদুল তোমার মেয়েরা বড় হয়ে জানবে – হাজার লক্ষ তরুণ-তরুণীর জন্য লড়েছিল ওদের বাবা। রাজনীতি করেছিল – সবার ভালোর জন্য। তোয়ালে মুড়ে টাকা নেওয়ার জন্য নয়। নিজের ভাগ্নীকে নিজের কন্যার মত বড় করছিল – মানুষ করার জন্য। কয়লা-বালি-সোনা মাফিয়াদের ‘রাজা ভাইপো’ বানাবার জন্য নয়।

সেদিন হয়তো প্রাকৃতিক কারণেই আমি থাকবো না – যেদিন শুভাইয়া-সুমি-রেজকা মাথা উঁচু করে রাজপথে হাঁটবে। বাপের গরবে গর্বিত ৩ কন্যাকে দেখে, হয়ত আনন্দে চোখ দিয়ে জল পড়বে তোমার প্রিয়া তহমিনার। তোমাকে খুউব মনে পড়বে ওর।

তোমাকে খুব মনে পড়বে সবারই সেদিন। মনে পড়বে প্রতিদিন, মিছিলে-শ্লোগানে-লড়াইয়ে।

সবাইকে ভালো রাখার লড়াইতে তুমি হারো নি। তোমাকে মনে পড়বে রোজ – ১৫০০০ হাজার যুবক-যুবতীর, যারা তোমাদের লড়াইয়ের দিনই, লড়াইয়ের চাপে শিক্ষকপদের নিয়োগপত্র পেয়েছে। মনে পড়বে ১৩০০০ ছেলেমেয়ের, যারা তোমার শহীদ হওয়ার দিনে, PSC র থেকে নিয়োগের ডাক পেয়েছে।

মনে রাখবে ওরা সবাই, যাদের কোলে মাথা রেখে তুমি বলেছিলে – আমি আর বাঁচবু নি! তাদের লড়াই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে মইদুল।

Spread the word

Leave a Reply