ব্লক স্তরে লড়াই করেই আদায় করুন সহায়ক মূল্য: বিমান বসু

১২ জানুয়ারি ২০২০ ,মঙ্গলবার



রাজ্যের ব্লকে ব্লকে লড়াই করে সরকার ঘোষিত ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আদায় করে নেওয়ার আহবান জানালেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় প্রয়াত তিন সিপিআই(এম) নেতার স্মরণসভায় তিনি বলেছেন, প্রয়াত নেতারা গণআন্দোলনে যে অবদান রেখেছিলেন তা স্মরণ করে এখনও সেই পথেই চলতে হবে। ব্লকে ব্লকে বিডিও অফিস ঘেরাও করে ধানের জন্য সরকার ঘোষিত সহায়ক মূল্য আদায় করে নিতে যদি পারেন তাহলেই তাঁদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।



এদিন বাঁকুড়া শহরের কমরার মাঠে বাঁকুড়ার প্রয়াত তিন সিপিআই(এম) নেতা কমরেড নকুল মাহাতো, কমরেড সত্য ব্যানার্জি ও কমরেড হীরালাল পালের স্মরণে সভা অনুষ্ঠিত হয় পার্টির বাঁকুড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে। এই সভায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান এবং সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য বিমান বসু বলেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে কৃষকরা ধান নিয়ে বিডিও অফিসে অবস্থান বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেছিলেন। কারণ তাঁরা ধানের সহায়ক মূল্য পাচ্ছিলেন না, চালকল মালিকরা কম দামে কিনছিলেন। সহায়ক মূল্যের দাবিতে তাঁরা দুপুর থেকে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন, রাত পর্যন্ত টানাপোড়েন চলার পরে বিডিও বাধ্য হন কৃষকদের সহায়ক মূল্যের ব্যবস্থা করতে। এটা কি বাঁকুড়ার ব্লকে ব্লকে করা যায় না? করা গেলে তবেই প্রয়াত নেতাদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হবে।



সভায় বসু বলেছেন, বর্তমানে কুয়াশায় ঢেকে থাকা সময়কে সরিয়ে সেখানে নতুন আলো আনতেই হবে। বামপন্থী, গণতান্ত্রিক শক্তিকেই এই কাজ করতে হবে। সমস্ত রকমের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বামপন্থী কর্মীদের এই কাজে নামতে হবে। এখানে অলসতার কোনও সুযোগ নেই। আমরা কুর্নিশ করি উত্তর ভারতের কৃষকদের লড়াইকে। প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে ৪৯ দিন হয়ে গেল ওদের আন্দোলনের। এই আন্দোলন সঠিক, যুক্তিপূর্ণ। আদানি আম্বানিদের স্বার্থরক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী কৃষি ও কৃষক বিরোধী আইন তৈরি করেছেন। কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সলা পরামর্শ করে কৃষি ও কৃষক বিরোধী আইন করেছেন। আমাদের রাজ্যে পাঞ্জাব হরিয়ানার মতো বড় বড় মান্ডি নেই। ওখানে কৃষকরা দাম নিয়ে দরদাম করতে পারেন। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কৃষক আন্দোলন নিয়ে দরদ দেখাচ্ছেন, বক্তৃতা করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের রাজ্যের কৃষকরা সরকার নির্ধারিত কুইন্টাল প্রতি ১৮৮৮ টাকা দাম আদৌ পাচ্ছেন না। তাঁদের ১১০০ টাকা দামেও বিক্রি করতে হচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য লড়াই করতেই হবে।



বাঁকুড়া শহরের কমরার মাঠে এই স্মরণসভায় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন হাজির হয়েছিলেন। গত ১১ নভেম্বর কমরেড সত্য ব্যানার্জি, ২০ নভেম্বর কমরেড নকুল মাহাতো ও ১ ডিসেম্বর কমরেড হীরালাল পাল প্রয়াত হন। এদিন তাঁদের স্মরণসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিমান বসু কমরেড নকুল মাহাতোর সঙ্গে সাতের দশকে রানিবাঁধ সহ দক্ষিণ বাঁকুড়া জুড়ে তাঁর কাজের একাধিক ঘটনাবলীর কথা তুলে ধরেন। বসু জানান, অত্যন্ত কষ্টের মধ্য দিয়ে সেই সময় পার্টির কাজ সংগঠিত করতে হয়েছে। হাসি মুখে কমরেড নকুল মাহাতো সেই কাজ করতে পারতেন। মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল প্রশ্নাতীত। জনগণের সঙ্গে তাঁর এই সংযোগের ভেতর দিয়ে বহু মানুষের সঙ্গে পরিচিত হই। প্রয়াত এই নেতৃবৃন্দ প্রতিকুল অবস্থার মধ্যেও কাজ করে গেছেন যা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।



এদিনের স্মরণসভায় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, কমরেড নকুল মাহাতোর অভিধানে অসম্ভব বলে কিছু ছিল না। যে কাজ আমরা করতে সাহস পেতাম না নকুলদা গিয়ে সেই কাজ করতে পারতেন। হাতে কলমে তিনি দেখিয়ে দিতেন অসম্ভবকে কী করে সম্ভব করা যায়। স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন আরএসপি’র জেলা সম্পাদক গঙ্গা গোস্বামী, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অনাথ মল্ল, সিপিআই’র জেলা সম্পাদিকা সর্বানী সিনহা ও সিপিআই(এমএল)’র জেলা সম্পাদক বাবলু ব্যানার্জি। সভায় প্রয়াত তিন নেতার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন ও সভাপতিত্ব করেন পার্টির বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি।



স্মরণসভার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেন, কেন্দ্রীয় কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সারা দেশজুড়ে যে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট তার পরিপ্রেক্ষিতে ঐ আইন স্থগিত রাখার কথা বলেছে। কৃষক সংগঠনগুলি যুক্তভাবে আন্দোলন করছে। এবার কী করা হবে সেই সিদ্ধান্ত তারাই নেওয়ার অধিকারী। আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজ্যে কেভিড পরীক্ষা প্রায় থমকে গেছে। আমরা এপ্রিল মাসেই বলেছিলাম রোগ পরীক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে। কিন্তু তা দেখা হয়নি, এখনও হচ্ছে না।



সূত্রঃ গণশক্তি পত্রিকা

Spread the word

Leave a Reply