ধর্মীয় বেড়াজালে জড়িয়ে তুরস্কের দেড় হাজার বছরের ঐতিহ্য জাদুঘর হাজিয়া সোফিয়া কে মসজিদে রূপান্তরিত…

১৪ জুলাই ২০২০
ওয়েবডেস্কের প্রতিবেদন:
ঐতিহ্যশালী দেড় হাজার বছরের পুরনো জাদুঘর হাজিয়া সোফিয়া- কে মসজিদে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্কের সরকার।তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত প্রখ্যাত জাদুঘর হাজিয়া সোফিয়া-কে মসজিদে রূপান্তরিত সংক্রান্ত একটি ডিক্রিতে সই করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলা হয়েছে, হাজিয়া সোফিয়া প্রকৃতপক্ষে একটি গীর্জা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল । পরবর্তী সময়ে তুরস্কের প্রশাসনিক আদালত বিশ্বখ্যাত সাংস্কৃতিক স্থাপনা হাজিয়া সোফিয়ার জাদুঘর মর্যাদা নাকচ করে রায় দেওয়ার মধ্যদিয়ে স্থাপনাটির মসজিদে পরিণত হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়।


পরবর্তী সময়ে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে এরদোয়ান জানান, ২৪ জুলাই ২০২০, থেকে হাজিয়া সোফিয়ায় নামাজ পাঠ করা যাবে। যদিও সবার প্রার্থনার উপযোগী করে তুলতে ছয় মাস সময় লাগবে। হাজিয়া সোফিয়াকে কি কাজে ব্যবহার করা হবে তার সিদ্ধান্ত নেয়া তুরস্কের সার্বভৌম অধিকার বলেও উল্লেখ করেন এরদোয়ান৷ এরদোয়ান জানান, মসজিদে পরিণত হলেও এটি সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে৷ ‘‘আমাদের অন্য সব মসজিদের মতই হাজিয়া সোফিয়ার দুয়ার স্থানীয় বা বিদেশি, মুসলিম বা অমুসলিম, সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকবে,’’ বলে জানান তিনি৷ তুরস্ক সরকারের এই পদক্ষেপে ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক সমাজ এবং বিশ্বের ধর্মীয় নেতারা তুর্কি সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।



ষষ্ঠ শতাব্দীতে ( ৫৩৭-১০৫৪) বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অধিপতি সম্রাট প্রথম জাস্টিনয়ান এই জাদুঘর নির্মাণ করেছিলেন । ওই সময় হাজিয়া সোফিয়া ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জা। ১৪৫৩ সালে অটোম্যান কনস্টান্টিনোপল (বর্তমানে ইস্তাম্বুল)
সাম্রাজ্যের দখল করলে দ্বিতীয় সুলতান মেহমেদ ক্যাথিড্রালটিকে( হাজিয়া সোফিয়া) কে মসজিদে পরিণত করেন। আধুনিক তুরস্কের স্থপতি মুস্তফা কামাল ।পরবর্তী সময় আতাতুর্ক এটিকে জাদুঘরে পরিণত করেন ১৯৩৫ সালে। এরপর থেকেই অসাম্প্রদায়িক তুরস্কের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল হাজিয়া সোফিয়া কে।


হাজিয়া সোফিয়ার স্ট্যাটাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তুরস্কের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে টানাপড়েন চলছে। ধর্মীয় কট্টরপন্থীরা অনেকদিন ধরেই ইউনেস্কো ঘোষিত এই বিশ্ব ঐতিহ্যকে মুসলিমদের নামাজ পাঠ করার জন্য খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। অটোমানদের কনস্টান্টিনোপল (বর্তমানে ইস্তানবুল) জয়ের বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়া সোফিয়ার ভেতরে নামাজ পাঠের ব্যবস্থাও করা হয় গত মাসে৷ শুক্রবার তুরস্কের প্রশাসনিক আদালত এবং এরদোয়ান ঘোষণার মধ্য দিয়ে ৮৬ বছর পর আবারও মসজিদে ফিরছে হাজিয়া সোফিয়া৷

হাজিয়া সোফিয়া পর্যটকদের কাছে তুরস্কের অন্যতম জনপ্রিয় ও আকর্ষক পর্যটন স্থান। প্রতি বছর ৩.৭ লাখের বেশি পর্যটক ঐতিহাসিক স্থাপনাটি দেখতে যান। কেবল অনন্য এক স্থাপত্যশিল্পই নয়, এটি পরিণত হয়েছে তুরস্কের রাজনীতির প্রতীকেও।
এরদোয়ানের রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (একেপি) ডেপুটি চেয়ারম্যান নুমান কর্তুলমুস এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, হাজিয়া সোফিয়া আমাদের ভৌগলিক সম্পত্তি। তলোয়ার দিয়ে যারা এটি জয় করেছেন এই সম্পত্তির অধিকার তাদেরই।এরদোয়ানপন্থিরা বরাবরই হাজিয়া সোফিয়াকে কনস্টান্টিনোপলের খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক হিসেবে দেখেন।



নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আত্মবিশ্বাসী একেপি। তার অংশ হিসেবে গত মাসে ১৪৫৩ সালে অটোমানদের কন্টানটিনোপল (বর্তমানে ইস্তাম্বুল) জয়ের বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়া সোফিয়ার ভেতরে নামাজ পাঠের ও ব্যবস্থা করা হয়।



এরদোয়ানের এই উদ্যোগকে একেপির ভোটার আকর্ষণের কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেকে। কেননা বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীন দলটির জনসমর্থন হারানোর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।


যদিও এ ধরনের উদ্যোগ সেখানে বড় ধরনের বিরোধের জন্ম দিয়েছে। ইস্টার্ন গির্জার প্রধান প্রথম পেট্রিয়ার্ক বার্থোলোমিউ আয়া সোফিয়াকে মসজিদে পরিণত করার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, হাজিয়া সোফিয়া মানব সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক স্থাপনা। এটি কারো একক সম্পত্তি নয়।


হাজিয়া সোফিয়াকে রাজনৈতিক বিতর্কের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার বিরোধিতা করেছেন ইস্তাম্বুলের গ্রিক বংশোদ্ভুতদের সংগঠনের প্রধান নিকোলাস উজোনোলুও তিনি মনে করেন, এই স্থাপনা ধর্ম এবং সভ্যতার মধ্যে স্বাধীনতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। একে ‘তলোয়ারের বিজয়’ হিসেবে দেখানো সমাজের জন্য ক্ষতিকর।



আয়া সোফিয়াকে নতুন করে পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন দেখেন না দেশটির ইতিহাসবিদেরাও। ইস্তাম্বুলে বোয়াজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের এডহেম এলডেম বলেন, সারা পৃথিবীতে এমন হাতে গোনা কয়েকটি নিদর্শন রয়েছে, যা রক্ষা করা উচিত। আয়া সোফিয়া সর্বজনীন এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বিশ্বের কাছে তা তুলে ধরারই পক্ষপাতী তিনি।

হাজিয়া সোফিয়া পর্যটকদের কাছে তুরস্কের অন্যতম জনপ্রিয় ও আকর্ষক পর্যটন স্থান। প্রতি বছর ৩.৭ লাখের বেশি পর্যটক ঐতিহাসিক স্থাপনাটি দেখতে যান। কেবল অনন্য এক স্থাপত্যশিল্পই নয়, এটি পরিণত হয়েছে তুরস্কের রাজনীতির প্রতীকেও।

এরদোয়ানের রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (একেপি) ডেপুটি চেয়ারম্যান নুমান কর্তুলমুস এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, হাজিয়া সোফিয়া আমাদের ভৌগলিক সম্পত্তি। তলোয়ার দিয়ে যারা এটি জয় করেছেন এই সম্পত্তির অধিকার তাদেরই।এরদোয়ানপন্থিরা বরাবরই আয়া সোফিয়াকে কনস্টান্টিনোপলের খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক হিসেবে দেখেন।



নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আত্মবিশ্বাসী একেপি। তার অংশ হিসেবে গত মাসে ১৪৫৩ সালে অটোমানদের কন্টানটিনোপল (বর্তমানে ইস্তাম্বুল) জয়ের বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়া সোফিয়ার ভেতরে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। এরদোয়ানের এই উদ্যোগকে একেপির ভোটার আকর্ষণের কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেকে। কেননা বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীন দলটির জনসমর্থন হারানোর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

যদিও এ ধরনের উদ্যোগ সেখানে বড় ধরনের বিরোধের জন্ম দিয়েছে। ইস্টার্ন গির্জার প্রধান প্রথম পেট্রিয়ার্ক বার্থোলোমিউ হাজিয়া সোফিয়াকে মসজিদে পরিণত করার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, হাজিয়া সোফিয়া মানব সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক স্থাপনা। এটি কারো একক সম্পত্তি নয়।

ইস্টার্ন অর্থডক্স চার্চের দ্বিতীয় প্রধান এর বিরোধিতা করেছেন। গ্রিস – যে দেশে লক্ষ লক্ষ অর্থডক্স খ্রীষ্টানের বাস – তারাও এর বিরোধিতা করেছে।




হাজিয়া সোফিয়াকে রাজনৈতিক বিতর্কের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার বিরোধিতা করেছেন ইস্তাম্বুলের গ্রিক বংশোদ্ভুতদের সংগঠনের প্রধান নিকোলাস উজোনোলুও

তিনি মনে করেন, এই স্থাপনা ধর্ম এবং সভ্যতার মধ্যে স্বাধীনতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। একে ‘তলোয়ারের বিজয়’ হিসেবে দেখানো সমাজের জন্য ক্ষতিকর।



আয়া সোফিয়াকে নতুন করে পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন দেখেন না দেশটির ইতিহাসবিদেরাও। ইস্তাম্বুলে বোয়াজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের এডহেম এলডেম বলেন, সারা পৃথিবীতে এমন হাতে গোনা কয়েকটি নিদর্শন রয়েছে, যা রক্ষা করা উচিত। আয়া সোফিয়া সর্বজনীন এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বিশ্বের কাছে তা তুলে ধরারই পক্ষপাতী তিনি।




ধর্মতত্ত্ববিদ এহসান এলিয়াচিক বলেন, আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের পেছনে ধর্মীয় কোনো যৌক্তিকতা নেই। তলোয়ার দিয়ে জয়ের মাধ্যমে কোনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে জোরপূর্বক দখল করা কোরআনে নিষিদ্ধ বলেও মত দেন তিনি।


গ্রিসের সংস্কৃতিমন্ত্রী লিনা মেনডোনি অভিযোগ করেছেন, তুরস্ক উগ্র জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় চেতনা জাগিয়ে তুলতে চাইছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, হাজিয়া সোফিয়ার মত একটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের আন্ত:-সরকার কমিটির অনুমোদন ছাড়া কোন পরিবর্তন করা যাবে না।

ইউনেস্কোর উপপরিচালক আরনেস্তো রামিরেজ একটি গ্রিক সংবাদপত্রে দেয়া সাক্ষাতকারে এর সাথে একমত প্রকাশ করে বলেছেন, এরকম পরিবর্তন আনতে হলে ব্যাপকভিত্তিক অনুমোদন প্রয়োজন।

জাতিসংঘের এই প্রতিষ্ঠানটি তুরস্কের কাছে এ প্রস্তাব সম্পর্কে একটি চিঠি দিয়েছে। কিন্তু মি. রামিরেজ জানান, তারা কোন উত্তর পাননি।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গ্রিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বলেছেন- অনুগ্রহ করে আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করবেন না। তুরস্ক কি আপনাদের কথায় চলবে? আমরা কাউন্সিল অব স্টেটের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। এরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Spread the word

Leave a Reply