সুশোভন পাত্র
১।
সেটা অবশ্য বড্ড সহজ সরল সময়ের কথা! জীবনে তখন মোবাইল ছিলনা। মার্কেটে তখন রিলস ছিল না। মনে তখন সেলফির ডিমান্ড ছিল না। বাড়িতে সুইগি জোমেটোর সাপ্লাই ছিল না। পপকর্ন সাজিয়ে আইনক্সের ভিড় ছিল না। ফিঙ্গার টিপসে UPI ছিল না। বরং বোরিং লোডশেডিংর সন্ধেতে ফিঙ্গার টিপসে নিকষ কালো আকাশে কালপুরুষ খোঁজার মত মিষ্টি একটা অবসর ছিল। তখনও চাঁদের বুড়ির চরকা কাটার গল্প বলার লোক ছিল। শহরের নিওন আলো আর দূষণের প্রিজম ভেদ করে মিল্কিওয়েটা খুঁজে নেওয়ার মত চোখ ছিল। ব্র্যায়ান অ্যাডামস বোধহয় ঐ সময়টার জন্যই বিখ্যাত সামার অফ সিক্সটি নাইনে লিখেছিলেন “Those were the best days of my life”
কার্ল সেগান অবশ্য ব্রায়ান অ্যাডমাসের মত অ্যালিগোরি করেননি। সরাসরিই বলেছিলেন “The nitrogen in our DNA, the calcium in our teeth, the iron in our blood, the carbon in our apple pies were made in the interiors of collapsing stars.” বিজ্ঞানের ভাষায় সেগান বলেছেন ‘স্টেলার নিউক্লিয়সিন্থেসিসের’ কথা!
বৈজ্ঞানিকদের ধারণা শুরুর দিকে ইউনিভার্সে ছিল মূলত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম। আপাত ভারী মৌল যেমন কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, লোহা সৃষ্টি হয়েছে বহু পরে; তারার অভ্যন্তরে নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে! তারা জীবনচক্রের শেষের দিকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে যখন সুপারনোভাতে পরিণত হয়, তখন এই মৌলগুলি মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীতে জীব সৃষ্টির যে বৈজ্ঞানিক ধারণা তাতে এই স্টেলার নিউক্লিয়সিন্থেসিসের অবদান প্রমাণিত ও স্বীকৃত। সেগানের কথাতেও তাই আমাদের সেই কসমিক অরিজিনের কথাই উঠে এসেছে। বস্তুত আমরাও তো এই বিশাল মহাকাশেরই ক্ষুদ্র একটা অংশ!
২।
মহাকাশ নিয়ে আমাদের কৌতূহলের শেষ নেই। রাকেশ শর্মার বিখ্যাত ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা’ হোক কিম্বা মহাকাশে প্রথম মহিলা ভ্যালেন্তিনা তেরস্কভা, রূপকথা হোক কিম্বা নেটফ্লিক্সের সিরিজ, সুনিতা উইলিয়ামসদের স্প্যাল্শডাউন কিংবা হেবেলস টেলিস্কোপে ধরা পড়া বিগ ব্যংর থিওরির নিখাদ ছবি - মহাকাশ নিয়ে আলোচনা দুনিয়ার সব চায়ের টেবিলেই হট কেক!
মানব সভ্যতার ইতিহাসে মহাকাশ বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটো অধ্যায় ১৯৬১-তে সোভিয়েতের মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের ভস্তক-১ মিশনে প্রথমবার মহাকাশে মানুষের পৌঁছে যাওয়া। আর ১৯৬৯-এর ২০শে জুলাই নীল আর্মস্ট্রংদের অ্যাপোলো-১১ মিশনে চাঁদের মাটিতে পা রাখা। বরাবরই উন্নত দেশগুলির টেকনোলজিক্যাল উন্নতির সাক্ষ্যের ক্যানভাস মহাকাশ!
১৯৫৭তে স্পুটনিককে যদি মহাকাশ অন্বেষণের প্রথম ফুটপ্রিন্ট ধরা হয় তাহলে তার পরবর্তী দীর্ঘদিন, এমনকি কোল্ড ওয়ারের সময়ও মহাকাশ বিজ্ঞানের অগ্রগতি ছিল যৌথ উদ্যোগ। যেখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এখনও মহাকাশ বিজ্ঞানের পায়োনিয়ার ISRO, NASA, Roscosmos, China National Space Administration – প্রত্যেকটি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত। আমাদের দেশে মহাকশ বিজ্ঞানের চর্চা হবে আমাদের দেওয়া ট্যাক্সের টাকায়। মহাকাশ অন্বেষণের নির্যাসে হবে জনকল্যাণ। এই ধারণাটাই পরিশ্রুত এবং আন্তরিক। এমনকি বহুক্ষেত্রে মহাকাশ অন্বেষণের মত জটিল বিষয়ে একাধিক যুযুধান রাষ্ট্র একসাথে কাজ করেছে এমন উদাহরণও নেহাত কম নয়। এই যে International Space Station-এ গিয়ে সুনিতা উইলিয়ামসরা কাজ করেন সেটাও বহুদেশের সম্মিলিত এবং যৌথ উদ্যোগেরই সাক্ষ্য।
৩।
রসিক বামপন্থীরা বলেন, মাধ্যাকর্ষণের গণ্ডীর বাইরে ক্যাপিটালিজমের আর অস্তিত্ব নেই! ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার করে যতই আপনি এক্সোস্ফিয়ারের দিকে এগোবেন; প্রফিট, সারপ্লাসের ক্লিশে কনসেপ্ট গুলো ততই মহাকাশে বিলীন হতে থাকবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মহাকাশ অন্বেষণের ধারণা এই রসিকতায় রসদও জোগাতো! ‘জোগাতো’ বললাম কারণ বিষয়টা এখন পাস্ট টেন্সে। খুব বেশি দেরি নেই যখন মহাকাশও বিক্রি হবে! বিগত এক দশকে তারই ব্রিডিং গ্রাউন্ড পুঁজিবাদের আঁতুড়ঘর আমেরিকা। অবাক হলেন? রসিকতা ভাবলেন? না শুনে, আকাশ থেকে পড়লেন? তাহলে সেই ‘আকাশ’থেকে পড়ারও কিন্তু ট্যাক্স নেবেন এবার এলন মাস্করা!
মহাকাশ অন্বেষণে SpaceX বা Blue Origin-র মত প্রাইভেট পার্টিদের দাপাদাপির সূত্রপাত ২০১১-১২ থেকে! মূলত বাজেট এবং ডিপ স্পেস রিসার্চের resource mobilization-র নামে NASA নিজেদের মহাকাশ যান তৈরি করা বন্ধ করে দেয়! এবং ‘কমার্সিয়াল ক্রিউ প্রোগ্রাম’-র মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হয় এলন মাস্কের কোম্পানি ‘স্পেস এক্সের’ ক্রিউ ড্রাগন স্পেসক্রাফট। এদের কাজ NASA-র মহাকাশচারী মহাকাশে নিয়ে যাওয়া এবং ফিরিয়ে নিয়ে আসা। ২০২৪ অবধি নাসার মাধ্যমে আমেরিকার সরকার স্পেস এক্সকে প্রায় ৪.৯ বিলিয়ন ইউ এস ডলার অনুদান দিয়েছে। আর আমেরিকার সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকাতেই আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে এলন মাস্কের SpaceX-র।
৪।
১৯৬৭ সালে ‘Outer Space Treaty’-তে বলা হয়েছিল যে ‘মহাকাশ মানবজাতির অভিন্ন উত্তরাধিকার’, এবং কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তি সেখানে মালিকানা দাবি করতে পারবে না। অথচ ২০১৫ সালের U.S. Space Act, পরে Artemis Accords, এবং একাধিক জাতীয় স্পেস আইন এই আন্তর্জাতিক নীতির সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে বলছে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থাগুলি চাঁদ বা গ্রহাণু থেকে সম্পদ আহরণ করতে পারে, এমনকি তার মালিকানাও দাবি করতে পারে। মহাকাশ অন্বেষণে এলন মাস্কদের এন্ট্রিকে ভ্যালিডেশন দিতে ফেক ন্যারেটিভও বাজারে নেমেছে। বলা হচ্ছে asteroid mining বা lunar extraction পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের ওপরে নাকি নির্ভরতা কমাবে।
কিন্তু যেটা বলা হচ্ছে না সেটা হল, এই কর্মকাণ্ডের ফলে চাঁদের মেরু অঞ্চলের প্রাচীন বরফ এবং বহু কোটি বছরের পুরোনো scientific crater ধ্বংস হয়ে যাবে—যার মধ্যে রয়েছে মানবজাতির মহাবিশ্ব সম্পর্কিত মূল্যবান প্রমাণ। অন্যদিকে, low-Earth orbit ইতিমধ্যেই কৃত্রিম উপগ্রহে ঠাসা। Starlink, Kuiper ইত্যাদি mega-constellation প্রকল্প মহাকাশে space debris ও light pollution এমনভাবে বাড়াচ্ছে, যাতে রাতের আকাশ দেখা এবং জ্যোতির্বিদ্যা গবেষণা দুইই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
৫।
SpaceX-র মালিক এলন মাস্ক ২০১৬ তে নিজের ঢাক নিজে পিটিয়ে বলেছিলেন, তিনি নাকি ২০১৮তেই মঙ্গল গ্রহে রকেট পাঠানো শুরু করবেন! সেই পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়িত না হলেও, তার ‘মানবজাতিকে বহুগ্রহে বসবাসযোগ্য প্রজাতি’ বানানোর স্বপ্ন এখনও বহাল তবিয়েতেই আছে। তার মতে, আমাদের সামনে নাকি দুটি পথ— হয় আমরা মহাকাশ উপনিবেশ গড়ে তুলব, না হলে মানবসভ্যতা বিলুপ্তির দিকে এগোবে।
অ্যামাজন এবং Blue Origin-র মালিক জেফ বেজোসও একই গোয়ালের গোরু। তিনি আবার বলেন, পৃথিবী-ই সৌরজগতের শ্রেষ্ঠ গ্রহ, কিন্তু তবুও যদি আমরা মহাকাশে উপনিবেশ গড়ে না তুলি, তাহলে মানবজাতির ভবিষ্যৎ হবে ‘স্থবির’; তাই "space colonization is necessary for growth."
আপাতভাবে এসব বক্তব্য দূরদর্শী বলে মনে করে ক্যামোফ্লেজড হবেন না। আসলে এই ধারণাগুলোর রন্ধ্রে পুঁজিবাদী স্বার্থই গভীরভাবে রুবারু। মাস্ক ও বেজোসের মতো বিলিয়নিয়াররা মহাকাশ উপনিবেশীকরণকে এমনভাবে বলেন যেন এটা মানবজাতির স্বাভাবিক ও অপরিহার্য ভবিষ্যৎ! অথচ এই ন্যারেটিভ থেকে পুরোপুরি বাদ পড়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা— আচ্ছা বলুন তো যে সংকট থেকে পালাতে বলা হচ্ছে, সেই সংকট তৈরি করেছে কে বা কারা? এই সংকট তৈরি করেছে পুঁজিবাদ! তৈরি করেছেন এলন মাস্ক, জেফ বেজোসের মত ধনীরা!
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ বিপর্যয়, সম্পদের বৈষম্য, এবং প্রযুক্তির নামে শ্রমের শোষণ—সবই তো পুঁজিবাদের অবশ্যম্ভাবী পরিহাস! অথচ পুঁজিবাদের দালালরা এখন মহাকাশে উপনিবেশ গড়ার কথা বলে ভবিষ্যৎ ‘রক্ষা’করার দাবি করছে। সমস্যার মূলে আঘাত না করে, সেই সমস্যার বাইরে এক নতুন ‘ঐশ্বরিক’ জগৎ খুঁজে বের করা, যে জগতের আধিপত্যের কেন্দ্রবিন্দু সেই বিলিয়নিয়াররাই - এটাই হল বরাবর পুঁজিবাদের নতুন বোতলে পুরনো মদ। মাস্কদের হাবভাব দেখলে মনে হয়, পুঁজিবাদের ব্যাধির গভীর মানসিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব এতটাই যে “It is easier to imagine the end of the world than to imagine the end of capitalism.”
৬।
এই পর্যন্ত পড়ে বলতে পারেন আমরা আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর নিয়ে কী আর হবে। এমনিতে বিজ্ঞান, বিজ্ঞানমনস্কতার উল্টো স্রোতেই যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী হাঁটেন সেটা বুঝতে আপনাকে রকেট সায়েন্স জানতে হবে না। গনেশের প্লাস্টিক সার্জারি হোক কিম্বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে নাকি কিছু হয় না; রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে এসব বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের বুকে ছুরি মারার কাজ মাঝে মাঝেই উনি করে থাকেন! নেহাত নেহেরু, বিক্রম সারাভাইরা একটা ইসরো বানিয়ে গেছিলেন বলে আজও ৫৬ ইঞ্চি ফুটেজ খেইয়ে বেঁচে আছেন! মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা সেমি ধর্মান্ধ একটা দেশে তাই বিলাসিতা তো বটেই!
কিন্তু মুশকিলটা হল মাস্কদের মহাকাশ বিক্রির প্রজেক্টে কিছুটা অংশীদারি স্টারলিঙ্কের চুক্তির মাধ্যমে আমাদের ঘাড়েও চাপিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন নরেন্দ্র মোদী! খুব সহজ করে বলতে গেলে স্টারলিঙ্ক আমাদের ইন্টারনেট দেবে! সাধারণত আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি সেটা দুভাবে। হয়, রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে মোবাইল ডেটা, কিম্বা অপ্টিক্যাল ফাইবার দিয়ে রাউটার। স্টারলিঙ্ক আপনাকে ইন্টারনেট দেবে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। দাবী করা হচ্ছে, যে রণে বনে জঙ্গলে – মানে দুর্গম জায়গাতেও স্টারলিঙ্ক আপনাকে ইন্টারনেট দেবে কারণ এটা স্যাটেলাইট নির্ভর। এলন মাস্কের কোম্পানি SpaceX, LEO – Low Earth Orbit -এ, মানে ধরুন আপনার মাথা থেকে ঐ ৫৫০ কিমি উপরে প্রায় ১০ হাজার স্যাটেলাইট লঞ্চ করেছে, যারা পৃথিবীর চারকদিকে ঘুরছে এবং স্টারলিঙ্কে ইন্টারনেট দিচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন গুলো অন্য জায়গায়! স্টারলিঙ্ক প্রকল্প মূলত একটি বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবস্থা। তাহলে বিদেশি কর্পোরেট সংস্থাই কি ভারতের আকাশ ও তথ্য পরিকাঠামোর উপর আধিপত্য করবে? সাধারণ মানুষের কাছে যখন ইন্টারনেট মৌলিক চাহিদা তখন তার প্রাইভেট কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে যাবে? এই ‘ডিজিটাল ঔপনিবেশিকতায়’-আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের তথ্য, এবং নাগরিকদের ডেটা নিরাপত্তার কী হবে? স্থানীয় ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা, সরকারি টেলিকম, এবং হাজার হাজার টেকনিশিয়ানদের কাজের কী হবে? পাশাপাশি, স্টারলিঙ্কের হাজারো উপগ্রহ আকাশদূষণ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণাকে ব্যাহত করছে তার সমাধানের কী হবে?
৭।
এই প্রশ্ন গুলো শুনে আবার ঐ সস্তা ন্যারেটিভটা মার্কেটে নামাবেন না প্লিজ। ঐ আমরা, মার্ক্সবাদীরা নাকি প্রযুক্তির বিরুদ্ধে। এটা মিথ্যে তো বটেই ঐতিহাসিক ভাবে ভুলও। ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যাবে লুডডাইট আন্দোলনের কথা। ইংরেজ টেক্সটাইল শ্রমিকদের একটি অংশ যারা নিজেদের সোশ্যালিস্ট বলে পরিচয় দিতেন এবং লুডডাইট আন্দোলনে অংশ হিসাবে দাবী করতেন যে ফ্যাক্টরিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে না। ১৮১১-১৮১৭ এই সময় কালে নটিংহ্যামশায়ার, ইয়র্কশায়ারের বিভিন্ন জায়গায় তারা ফ্যাক্টরিতে লুডডাইটরা গোপন অভিযানে ফ্যাক্টরিতে ঢুকে নতুন মেশিনগুলি ভাংচুর করেন। পরবর্তী সময়ে মার্ক্স এই লুডডাইট আন্দোলনের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছিলেন।
মহাকাশ অন্বেষণ হবে, সভ্যতার ইতিহাসে নতুন প্রযুক্তি আসবে সেটাই স্বাভাবিক। নতুন প্রযুক্তি এলে পুরনো কাজের ধরণ বদলাবে সেটাই স্বাভাবিক। মহাকাশ বিজ্ঞানে নতুন দিক উন্মোচিত হবে তা মানব সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করবে সেটাই স্বাভাবিক। মার্ক্সবাদের মৌলিক বোঝাপড়ায় এই কোনটার সাথেই কোন বিরোধিতা নেই। বিরোধিতাটা অন্য জায়গায়। মহাকাশ অন্বেষণ হবে কার উদ্যোগ রাষ্ট্র না এলন মাস্কদের? সম্পদের আহরণ হবে নিয়ন্ত্রিত না অনিয়ন্ত্রিত? বর্ধিত উৎপাদন বা তার মূল্য কার কাছে যাবে, মুনাফা খোর মালিকদের কাছে? না, মেহনতি মানুষের কাছে। এই উৎপাদন বা তার মূল্য কি কাজে ব্যবহার হবে, মালিক শ্রেণীর আরও মুনাফা তৈরির জন্য না শ্রমিক শ্রেণীকে নতুন প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মক্ষম করতে? বিরোধিতাটা ঠিক এখানেই। আর মার্ক্সবাদ এখানেও ঐ মেহনতি মানুষের পক্ষেই।