পলিট ব্যুরো'র বিবৃতি

১১ জানুয়ারি, ২০২০ পলিট ব্যুরো ======= সংবিধান রক্ষার সংগ্রাম জারি রাখতে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ঐক্যের ডাক সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বাতিলের সংগ্রামে ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। এই বিক্ষোভকে জারি রাখা এবং এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে দু’দিনের বৈঠকে। ৮’র ধর্মঘট সর্বাত্মক করার জন্য দেশের শ্রমিক শ্রেণিসহ মেহনতি জনতাকে অভিনন্দন জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রের দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে। নয়াদিল্লিতে এই বৈঠকের পর রবিবার বিবৃতি দিয়েছে পলিট ব্যুরো। দেশজুড়ে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভ স্বাগত জানিয়ে পুলিশি নিপীড়নের নিন্দা করে ভুয়ো মামলা তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের ওপর চাপিয়ে রাখা বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের দাবি জানানোর সঙ্গে জেএনইউ’তে সঙ্ঘের হামলার নিন্দা করেছে পলিট ব্যুরো। কেরালার বিরুদ্ধে তীব্র আর্থিক বৈষম্য চালাচ্ছে কেন্দ্রের সরকার। রাজ্যের প্রাপ্য মেটানোর দাবি তুলেছে পলিট ব্যুরো। বাগদাদে ইরানের জেনারেল কাসেম সুলেমানিকে হত্যায় তীব্র নিন্দা করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। পলিট ব্যুরো বলেছে, আন্তর্জাতিক বিধির তোয়াক্কা না করে এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৭-১৯ জানুয়ারি তিরুবনন্তপুরমে বৈঠক কেন্দ্রীয় কমিটির। পলিট ব্যুরোতে আলোচনার ভিত্তিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খসড়া রিপোর্ট পেশ হবে বৈঠকে। সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বাতিলে আন্দোলন প্রসঙ্গে পলিট ব্যুরো বলেছে, সংবিধান এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে রক্ষার পক্ষে এই আন্দোলন বেড়ে চলেছে। সংবিধানে নাগরিকত্বের ধর্মনিরপেক্ষ ধারণা খারিজ করছে সিএএ। নাগরিকত্বের স্বীকৃতির জন্য ধর্মীয় পরিচয় টেনে আনা হয়েছে। সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বিরোধে গণআন্দোলনে অংশ নিয়েছে ছাত্র, যুবসহ সমাজের সব অংশ।  সংবিধান এবং তার গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ আক্রান্ত পরিষ্কার বুঝেছেন যাঁরা আন্দোলনে শামিলও হয়েছেন তাঁরা। গত এক মাসে প্রতিদিন বিক্ষোভ হয়েছে দেশের সর্বত্র। নির্মম পুলিশি দমনের নিন্দায় পলিট ব্যুরো বলেছে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে এই আচরণ করা হয়েছে। জামিয়া মিলিয়া এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশের হিংসা নিন্দাজনক। সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে সরকারকে। জেলবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। পুলিশ সবচেয়ে বর্বর দমন চালিয়েছে বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী, বিশেষত মুসলিমদের ওপর চালানো হয়েছে নিপীড়ন। পুলিশের গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। কয়েকশো ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, চাপানো হয়েছে জরিমানা। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের নির্দেশে এসব চলছে। নগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) মনে করিয়েছে যে, সিএএ এবং এনআরসি একটি অপরটির সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। ২০০৩’র নাগরিকত্ন নথিভুক্তি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র বিধি অনুযায়ী জাতীয় জনপঞ্জি বা এনপিআর তৈরি করা হবে। এই এনপিআর হবে সারা দেশে এনআরসি’র ভিত্তি। উল্লেখ্য, এই সময়ে কেন্দ্রে অটলবিহারী বাজপেয়ী মন্ত্রীসভার অন্যতম সদস্য ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। পলিট ব্যুরো বলেছে, ২০২০’র ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনপিআর চালানোর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্র। এই এনপিআর এবং এনআরসি প্রক্রিয়ায় লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষ বিপন্ন হবেন। বিপন্ন হবেন প্রান্তিক বিভিন্ন সম্প্রদায়। এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্য মুসলিমরা। সিএএ বাতিলের দাবি ফের তুলে পলিট ব্যুরোর দাবি, এনপিআর নিয়ে এগনোর অভিসন্ধি বাতিল করতে হবে মোদী সরকারকে। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ঘোষণা করেছেন যে তাঁরা এনআরসি মানছেন না। এই মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে পলিট ব্যুরোর আবেদন, সেক্ষেত্রে এনপিআর প্রক্রিয়াও স্থগিত করুন। এনআরসি’র প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে এনপিআর বন্ধ রাখতে হবে। জম্মু ও কাশ্মীর প্রসঙ্গে পলিট ব্যুরো বলেছে, সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর পাঁচ মাস হয়ে গিয়েছে। এখনও জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকরা অধিকার এবং স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত। কয়েকশো রাজনৈতিক নেতা, সমাজকর্মী বন্দি। ইন্টারনেট বন্ধ, জমায়েতের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মাথায় রেখে ইন্টারনেট সংযোগ ফিরিয়ে দিতে হবে। বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে, ফিরিয়ে দিতে হবে প্রাপ্য অধিকার। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে পলিট ব্যুরো বলেছে, ৫ জানুয়ারি এবিভিপি-আরএসএস’র হামলায় আহত হয়েছেন ছাত্র, শিক্ষকরা। দিল্লি পুলিশের ভূমিকা হতবাক করার মতো। দাঁড়িয়ে থেকে দুষ্কৃতীদের ঢুকতে দিয়েছে, তাণ্ডব চলতে দিয়েছে। আবার নিরাপদের বেরনোরও ব্যবস্থা করে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। স্পষ্ট ভাষায় পলিট ব্যুরো বলেছে, মোটেই নিরপেক্ষ তদন্ত করছে না দিল্লি পুলিশ। দোষীদের ধরার বদলে ছাত্রসংসদের কার্যনির্বাহী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের দোষী সাজানোর চেষ্টা চলছে। পলিট ব্যুরোর দাবি, মানসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। চড়া হারে ফি-বৃদ্ধি বাতিল করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি ধ্বংস করছেন যে উপাচার্য, সরাতে হবে তাঁকে। ধর্মঘটে ব্যাপক সাফল্যের জন্য পলিট ব্যুরো অভিনন্দন জানিয়েছে শ্রমিক শ্রেণি, কর্মচারী, কৃষক, খেতমজুর, ছাত্র সহ মেহনতি জনতার অন্য অংশগুলিকে। পলিট ব্যুরো বলেছে, সব শিল্পক্ষেত্র, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র, আর্থিক এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রেও ধর্মঘট হয়েছে। হাজার হাজার কৃষক এবং খেতমজুর রেল রোকো এবং রাস্তা অবরোধে শামিল হয়েছেন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপক। শ্রমিক বিরোধী এবং জনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে না এগতে মোদী সরকারকে সতর্কতার কড়া বার্তা দিয়েছে ধর্মঘট। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে জিনিসপত্রের দামের পাশাপাশি পেট্রোল-ডিজেলের ওপর চাপানো উৎপাদন শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। বলা হয়েছে, খাদ্যদ্রব্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সমানে বেড়ে চলা উদ্বেগজনক।
শেয়ার করুন

উত্তর দিন